ভুত চতুর্দশীর মাহাত্ম্য

ভূত চতুর্দশী হিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ তিথি। এটি কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয়। হিন্দু মতে বিশ্বাস করা হয় এই তিথিতে, স্বর্গ ও নরকের দ্বার কিছুক্ষণের জন্য খোলা থাকে এবং মৃত আত্মারা মর্ত্যে নেমে আসে। এই দিনে, হিন্দুরা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে। ভূত চতুর্দশীর মাহাত্ম্য নিম্নরূপ: পূর্বপুরুষদের স্মরণে: এই দিনে, হিন্দুরা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে দান-ধ্যান, পঞ্চপ্রদীপ জ্বালানো, শ্রাদ্ধ-তর্পণ, নিরামিষ খাবার খাওয়া ইত্যাদি করে। বিশ্বাস করা হয় যে এতে পূর্বপুরুষরা সন্তুষ্ট হন এবং তাদের আশীর্বাদ লাভ হয়। বৈষয়িক সুখ-সমৃদ্ধি: ভূত চতুর্দশীতে দান-ধ্যান করলে বৈষয়িক সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায় বলে বিশ্বাস করা হয়। এই দিনে, হিন্দুরা গরীব-দুঃস্থদের সাহায্য করে, পশুদের খাওয়ায়, ব্রাহ্মণদের দান করে ইত্যাদি। পাপমোচন: ভূত চতুর্দশীতে পিতৃদায় মুক্তি হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। এই দিনে, হিন্দুরা তাদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে পিতৃদায় পূজা করে। ভূত চতুর্দশীর দিনের কিছু প্রথা ও রীতি নিম্নরূপ: ১৪ প্রদীপ জ্বালানো: এই দিনে, হিন্দুরা ১৪টি প্রদীপ জ্বালায়। বিশ্বাস করা হয় যে এতে পূর্বপুরুষদের আত্মা শান্ত হয়। ১৪ শাক খাওয়া: এই দিনে, হিন্দুরা ১৪টি শাক খায়। বিশ্বাস করা হয় যে এতে স্বাস্থ্য ও শক্তি বৃদ্ধি পায়। তর্পণ করা: এই দিনে, হিন্দুরা তাদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করে। নিরামিষ খাওয়া: এই দিনে, হিন্দুরা নিরামিষ খাবার খায়। বিশ্বাস করা হয় যে এতে পূর্বপুরুষদের আত্মা সন্তুষ্ট হয়। ভূত চতুর্দশীতে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানোর দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, এটি অশুভ শক্তিকে দূর করার জন্য করা হয়। কার্তিক মাসের শেষ চতুর্দশী তিথিতে মনে করা হয় যে স্বর্গ ও নরকের দ্বার খোলা থাকে এবং এই সময় অশুভ শক্তি পৃথিবীতে প্রবেশ করে। চোদ্দ প্রদীপ জ্বালিয়ে এই অশুভ শক্তিকে দূর করা হয়। দ্বিতীয়ত, চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানো একটি শুভ কাজ হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি মনে করা হয় যে এটি পরিবারের সমৃদ্ধি এবং সুখ নিয়ে আসে। চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানোর নিয়ম হল: প্রদীপগুলি মাটির হতে হবে। প্রদীপগুলিতে ঘি বা সরষের তেল ব্যবহার করতে হবে। প্রদীপগুলিকে প্রতিটি ঘরের কোণে এবং বাড়ির প্রবেশদ্বারে জ্বালানো উচিত। প্রদীপগুলি জ্বালানোর সময় একটি মন্ত্র উচ্চারণ করা যেতে পারে, যেমন: ওঁ অগ্নি দেবতা, তুমি আমার বাড়ি থেকে সমস্ত অশুভ শক্তিকে দূর করো। তুমি আমার পরিবারের জন্য সুখ এবং সমৃদ্ধি নিয়ে আসো। ভূত চতুর্দশীতে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানো একটি প্রাচীন হিন্দু প্রথা। এই প্রথাটি আজও অনেক বাঙালি পরিবারে পালিত হয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভাদ্র মাসে জন্ম হলে মানুষ কেমন হয়

শ্রাবণ মাসে জন্ম হলে মানুষ কেমন হয়

হাতের আয়ু রেখা বিচার