|
চিন্তা সর্ব শক্তিমান |
মানুষের মস্তিষ্কের কার্যকরী ক্ষমতা নির্দেশ করে সেই মানুষ কতটা বুদ্ধিমান। বর্তমান যুগে মানুষ intelligent হয়েছে, তার জন্য আদিম যুগ থেকে এই পর্যন্ত হাজার হাজার বছর সময় লেগেছে। অর্থাৎ মানুষের বুদ্ধির বিকাশ হয়েছে। মানুষের মধ্যে বুদ্ধির বিকাশ হওয়া সত্বেও পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই, কোন না কোন সমস্যা দ্বারা পিরিত, এর কারণ হলো বাস্তব ও সত্যকে উপলব্ধি করতে না পারা। সনাতন শাস্ত্র মানুষকে সত্য উপলব্ধি করতে শেখায়।
মস্তিষ্কের বিকাশ হতে হাজার হাজার বছর সময় লেগেছে, সেই উন্নত মস্তিষ্কের বুদ্ধি ব্যবহার করেও মানুষ বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কমবেশি বুদ্ধি আছে, কিন্তু বুদ্ধি সকলেই সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। কারণ মানুষের বুদ্ধি বার বার মনের দ্বারা প্রভাবিত হয়। বুদ্ধি দ্বারা ভালো-মন্দ বিচার করা গেলেও মনের তীব্র প্রভাবের কারণে, তেমনটা সব সময় করা হয় না। অর্থাৎ মনের প্রভাবে বুদ্ধিভ্রংশ হয়, বুদ্ধি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। মস্তিষ্ক মানুষের শরীর পরিচালনা করে, মস্তিষ্কের থেকে যেভাবে নির্দেশ আসে শরীর সেভাবে প্রতিক্রিয়া দেয়। মস্তিষ্কও মনের দ্বারা প্রভাবিত হয়। মস্তিষ্ক ইন্টালিজেন্ট হলেও সত্য-মিথ্যার যাচাই করে না, মন যেভাবে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে, মস্তিষ্ক সেভাবেই শরীর পরিচালনা করে।
উদাহরণস্বরূপ
ধরুন আপনি রাস্তা থেকে হেঁটে যাচ্ছেন, হঠাৎ একটা ষাঁড় আপনাকে তাড়া করেছে, স্বাভাবিকভাবেই আপনি ষাঁড়ের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবার জন্য কোন নিরাপদ স্থানে ছুটে পালাবেন, তখন আপনি অনুভব করতে পারবেন, আপনি দৌড়েছেন তার জন্য আপনার শরীরে পরিশ্রমের অনুভূতি হচ্ছে, মনে ভয়ের সঞ্চার হয়েছে, বুক ধুকপুক করছে। আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও এমনই হতো, সকলের ক্ষেত্রেই এমনই হয়। আবার ধরুন আপনি ঘুমিয়ে আছেন, ঘুমের মাঝে ঠিক একই স্বপ্ন দেখলেন, ষাঁড়ের তাড়া খেয়ে আপনি ছুটে পালাচ্ছেন, হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল তখন আপনি অনুভব করতে পারবেন, যে আপনার শরীর ঠিক একই রকমভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, অর্থাৎ ঘুমের মাঝে দৌড়ানোর কারণেও আপনার শরীরে পরিশ্রমের অনুভূতি হবে, ভয়ের সঞ্চার হবে, বুক ধুকপুক করবে।
তাহলে বোঝার চেষ্টা করুন একটা ঘটনা ছিল বাস্তব সত্য, আরেকটা ঘটনা ছিল নিছক মনের কল্পনা, কিন্তু আপনার মস্তিষ্ক দুটো ঘটনাকেই সত্য মনে করে, আপনার শরীরে সমান প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এখান থেকে বোঝা যায় যে আমাদের মস্তিষ্ক সত্য-মিথ্যা যাচাই করে না, মনের দ্বারা যেভাবে প্রভাবিত হয় সেভাবেই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই বিষয় গুলো প্রাচীনকালের মনীষীগণ খুব সুন্দর ভাবে উপলব্ধি করে এর থেকে মুক্তি পাবার উপায় বলে গেছেন, তারা বলেছেন চিন্তাই সর্বশক্তিমান। অর্থাৎ আপনি অনবরত যেমন ধরনের চিন্তা করবেন, আপনার মস্তিষ্ক সেটাকেই সত্যি মনে করে, আপনার শরীরে তেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। আপনার কথা বার্তা অঙ্গভঙ্গিও আপনার মনোভাব আপনার চিন্তাকে প্রকাশ করে।
যেমন ধরুন আপনার ধারনা আপনি দুঃখী, মনের মধ্যে সবসময় চিন্তা করেন যে আমার মত দুঃখী আর কেউ নেই, অনবরত এই চিন্তা করার কারণে আপনার মস্তিষ্ক মনের এই প্রভাবকে আপনার কথাবার্তা, স্বভাব চরিত্র, অঙ্গভঙ্গিতে প্রকাশ করবে, যে আপনি দুঃখী, আপনার কাউকে মুখ ফুটে বলতে হবে না, মানুষ আপনাকে দেখে উপলব্ধি করতে পারবে। ঠিক একই রকমভাবে আপনার কাছে কিছু না থাকলেও, আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত কয়েক বার করে নিজেকে বলেন, আমি রাজা, আমি যে কোন সমস্যার সমাধান ঠান্ডা মাথায় করতে পারি, আমি কখনো কারো প্রতি রাগ করিনা। প্রথম প্রথম এই কথাগুলো আপনার মস্তিষ্ক মেনে নেবে না, কিন্তু প্রতিদিন নিয়মিত এই কথাগুলো নিজেকে বলে, নিজের মনকে প্রভাবিত করলে আপনার মস্তিষ্ক একসময় অবশ্যই এই কথাগুলোকে স্বীকার করে নেবে। আর যদি আপনার মস্তিষ্ক এই কথাগুলোকে স্বীকার করে নিতে পারে, তাহলে আপনার কাছে অর্থ না থাকলেও আপনার কথাবার্তা অঙ্গভঙ্গিতে রাজকীয় ভাব প্রকাশ পাবে, কারো কটুকথাতে চট করে রাগ হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে, যেকোনো সমস্যা আপনি বিচলিত হবেন না, কারণ আপনার মস্তিষ্ক মেনে নিয়েছে যে আপনি ঠান্ডা মাথায় সমস্যা সমাধান করতে পারেন। মস্তিষ্ক ও মনের কর্ম পদ্ধতি উপলব্ধি করেই হয়তো প্রাচীনকালের মুনি-ঋষিরা বলেছিলেন
চিন্তা সর্বশক্তিমান। মানুষের বুদ্ধি দ্বারাই মানুষ নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে এক উন্নত জীবন উপভোগ করতে পারে। আবার এই বুদ্ধি ভুল ভাবে পরিচালনা করবার কারণে মানুষের জীবন একদম তছনছ হয়ে যায়। বুদ্ধি কে সঠিকভাবে ব্যবহার করবার জন্য সবার প্রথমে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করা অভ্যাস করতে হবে। আর মনকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ বিষয় নয়। মন স্থির না হলে মনকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়না, মন স্থির করতে হলে অবশ্যই শরীরকে স্থির হতে হবে। যেমন আপনি দৌড়াতে দৌড়াতে আহার করতে পারেন না, আহার করবার জন্য স্থির থাকার প্রয়োজন, ঠিক তেমনি মনকে শান্ত করতে হলেও স্থির ভাবে বসার প্রয়োজন। অর্থাৎ আপনি প্রতিদিন ধ্যান অভ্যাস করবার মাধ্যমে মনকে স্থির করতে পারেন, এবং শুভ চিন্তার মাধ্যমে
নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
যদি এই লেখাটিই আপনি পড়ছেন তাহলে অবশ্য লেখাটির শেয়ার করে দেবেন, যাতে আপনার দ্বারা কোন মানুষ উপকৃত হতে পারে ধন্যবাদ
Astrolger
Dr Prodyut Acharya
M +91 9333122768
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন