বিশ্বখ্যাত মেধাবীরাই কেন নাস্তিক হয়?
![]() |
MyAstrology |
— যুক্তি, আস্থা ও মানুষের মানসিক দ্বৈততা নিয়ে এক দার্শনিক বিশ্লেষণ
✍️ Prodyut Acharya
সমাজে একটি প্রচলিত ধারণা হল: “বিশ্বখ্যাত মেধাবীরা সাধারণত ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না” বা তারা নাস্তিক।
এই বক্তব্যটি যেমন বিভ্রান্তিকর, তেমনি একপাক্ষিক।
কারণ "মেধা" বলতে আমরা কী বুঝি, এবং "বিশ্বাস" বা "আস্থা" মানে ঠিক কী — এই দুই বিষয় না বুঝলে ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছানো স্বাভাবিক।
📚 মেধা কাকে বলে? — একটি বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি
মেধা কেবলমাত্র পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের বিষয় নয়।
দার্শনিকের মেধা চিন্তাশক্তিতে,
বিজ্ঞানীর মেধা বিশ্লেষণ আর পর্যবেক্ষণে,
কৃষকের মেধা বাস্তব অভিজ্ঞতা ও সৃষ্টিশীল প্রয়োগে,
গৃহিণীর মেধা সংসার রচনায়,
সাধকের মেধা আত্মোপলব্ধিতে।
অর্থাৎ, মেধা একমাত্রিক নয়, এটি ক্ষেত্রভেদে বিভিন্নভাবে প্রকাশ পায়।
⚖️ ধর্ম বনাম বিজ্ঞান? নাকি পরিপূরক দু'টি পথ?
আমরা মানবজাতির মানসিক গঠন যদি বিশ্লেষণ করি, দেখি মানুষের মধ্যে দুটি বিপরীতমুখী প্রবণতা রয়েছে:
যুক্তি, বিশ্লেষণ, প্রমাণনির্ভর মনন — যা বিজ্ঞান জন্ম দেয়
আস্থা, অনুভব, মান্যতা ও অভিজ্ঞতা — যা ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার ভিত্তি
ইমানুয়েল কান্ট এই বিষয়ে এক যুগান্তকারী মন্তব্য করেন:
“I had to suspend knowledge to make room for faith.”
অর্থাৎ, মানুষের জ্ঞান যেখানে থেমে যায়, বিশ্বাস সেখানে কাজ করে।
কান্ট আরও বলেন:
“Reason has limits, but faith extends beyond them.”
🚀 বিজ্ঞান কী দিয়েছে? কিন্তু কী দিতে পারেনি?
আজ আমরা এমন এক যুগে আছি, যেখানে:
মানুষ চাঁদে যাচ্ছে, মঙ্গলগ্রহে যন্ত্র পাঠাচ্ছে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের ঘরে
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিতে জীবনদৈর্ঘ্য বেড়েছে
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়:
আমরা কি সত্যিই সুখে আছি?
প্রযুক্তি কি আমাদের মানসিক শান্তি দিয়েছে?
আত্মহত্যা, মানসিক চাপ, সম্পর্ক ভাঙন কেন এত বেড়েছে?
এ প্রশ্নগুলোর উত্তর বিজ্ঞান দিতে পারে না, কারণ এসব প্রশ্ন বিজ্ঞান পরীক্ষাগারে মাপতে পারে না।
🧘 যুক্তি দিয়ে সব আবেগের সমাধান হয় না
মানুষের সমস্যা দুই ধরনের:
যুক্তিগত সমস্যা — বিজ্ঞান সমাধান দেয়
আবেগীয়/অস্তিত্বগত সমস্যা — শুধুমাত্র বিশ্বাস, আত্মজিজ্ঞাসা ও আধ্যাত্মিকতা দিয়ে মোকাবিলা সম্ভব
ধরুন, কেউ সব কিছু পেয়েও দুঃখী।
তখন আপনি তাকে নিউটনের সূত্র দিয়ে কি বোঝাতে পারবেন, কেন সে দুঃখ পাচ্ছে?
পারবেন না।
তখন সে প্রশ্ন করে — “আমি কে?”, “আমার জীবনের উদ্দেশ্য কী?”, “আমার দুঃখের কারণ কী?”
এই প্রশ্নগুলি ধর্ম ও দর্শনের অন্তর্গত, বিজ্ঞান নয়।
🌠 সব মেধাবী কি নাস্তিক? — কিছু বাস্তব উদাহরণ
✅ Albert Einstein:
“Science without religion is lame, religion without science is blind.”
তিনি বিশ্বাস করতেন — এই সৃষ্টিতে এক সুগভীর বুদ্ধিমত্তা আছে।
✅ Isaac Newton:
তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বকে জোরালোভাবে বিশ্বাস করতেন এবং বাইবেল পড়তেন গভীরভাবে।
✅ Max Planck (Quantum Theory-র জনক):
“Religion and science both need belief in God — religion at the beginning, science at the end.”
✅ Sunita Williams:
মহাকাশ অভিযানের পর ফিরে হিন্দু দেবী মা কালী'র পুজো করেন।
এটা বিজ্ঞানের নয়, ব্যক্তিগত আস্থার বিষয়।
🔄 তাহলে কিছু মেধাবী কেন নাস্তিক হন?
👉 কারণ তারা যুক্তিকে সব কিছুর উপরে স্থান দেন
👉 ধর্মের নামে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস দেখলে তারা তাতে বিতৃষ্ণ বোধ করেন
👉 অনেক সময় তারা সত্য ধর্ম না বুঝেই ধর্মকে অস্বীকার করেন
কিন্তু সত্য ধর্ম মানে কিন্তু:
অন্ধভক্তি নয়
আত্মজিজ্ঞাসা, সত্যানুসন্ধান এবং হৃদয়ের শুদ্ধতা
বেদান্ত বলে:
“আত্মা অজন্মা, অমর ও নিত্য — একেই জানো, তিনিই ব্রহ্ম।”
এ কথা বিজ্ঞান বলে না, কিন্তু কোটি কোটি মানুষ তা হৃদয় দিয়ে অনুভব করে।
🧭 উপসংহার: বিজ্ঞান এবং বিশ্বাস — পরস্পরের বিরোধী নয়
সত্য মেধাবী তিনি, যিনি বুঝতে পারেন:
বিজ্ঞান আমাদের বাহ্যিক দিক গড়ে দেয়
ধর্ম আমাদের অন্তর্জগত তৈরি করে
একজন সত্যিকারের মেধাবী ব্যক্তি দুই-ই গ্রহণ করেন, একটিকে বাদ দিয়ে নয়।
“Where reasoning ends, meaningful silence of faith begins.”
✍️ লেখক পরিচিতি
Prodyut Acharya
Astrologer & Palmist | Vedantic Thinker
📍 Ranaghat, West Bengal
📞 +91 9333122768
🌐 www.myastrology.in
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন