জীবন মানেই পরিবর্তন: মহাভারতের আলোকে মানসিক বিপ্লব ও জ্যোতিষের গোপন মানচিত্র

“আমি কে?” — জন্ম, নিয়তি ও মুহূর্তের আত্মজিজ্ঞাসা
✍️ প্রদ্যুৎ আচার্য
ছোটবেলা থেকেই জীবনের কঠোর বাস্তবতা আমাকে এক গভীর প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে—
“আমি কেন জন্মালাম?”
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমি এক অন্যরকম বোধে পৌঁছেছি— একটি দীর্ঘ উপলব্ধির পথ পেরিয়ে, যা আজও চলছে।
আমার জন্ম আমার ইচ্ছা অনুযায়ী হয়নি।
বিশ্বে এত পরিবার থাকতে, কেন আমি এই পরিবারেই জন্মালাম?
একজন ধনী, প্রতিপন্ন পরিবারেও তো জন্ম হতে পারতো?
ঠিক যেমন মৃত্যু কখন, কিভাবে, কোথায় হবে— সেটাও আমি ঠিক করতে পারবো না।
📖 "We can never know the thing-in-itself" — ইমানুয়েল কান্ট (Immanuel Kant)
(আমরা কোনো কিছুর প্রকৃত স্বরূপ কখনোই জানতে পারি না)
আমার জন্ম-মৃত্যু ঠিক তেমনই— আমার উপলব্ধির বাইরের জগৎ, যেখানে আমি কেবল অবলোকনকারী মাত্র।
তবুও আমি বিশ্বাস করি—
আমি স্বাধীন।
কারণ আমি জীবনকে মেনে নিয়েছি।
আমি বিশ্বাস করি, যা ঘটছে তা-ই ঘটার কথা ছিল।
এই গ্রহণযোগ্যতার মধ্য দিয়েই আমি মুক্তির স্বাদ পাই।
আমার অস্তিত্ব এই প্রকৃতির অংশ।
তাই আমার মধ্যেও প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য থাকবে— আনন্দ, দুঃখ, হাসি, কান্না, উৎসাহ ও বিষণ্ণতা।
এই অনুভূতিগুলোকে আমি অস্বীকার করি না।
বরং আমি তাদের উপলব্ধি করি, বুঝি, আর সত্য বলে স্বীকার করি।
🔍 "Truth is a pathless land." — জিদ্দু কৃষ্ণমূর্তি
(সত্যের কোনো নির্দিষ্ট পথ নেই)
আমার সত্য আমার নিজের, তাই আমার জীবনদর্শনও আমার ব্যক্তিগত।
আমি ক্ষোভ পোষণ করি না, কারণ আমি জানি পরিস্থিতি মানেই এমন কিছু, যা অন্যের দ্বারা গঠিত।
সেই পরিস্থিতিতে আমি যতটা পারি, আমার বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়ে কাজ করি।
তাতে যদি কিছু পরিবর্তন না-ও আসে, তবু অন্তত নিজের কর্তব্যটুকু পালন করি।
জীবন জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটি প্রবাহমান প্রক্রিয়া, যা পরিবেশ, মানুষ, জীবজন্তু, উদ্ভিদ, প্রকৃতি— এই পুরো সৃষ্টির সঙ্গে সমন্বয় করে চলে।
তাই যা কিছু ঘটছে, সেটাকে মেনে নেওয়াই আমার কাছে সবচেয়ে জ্ঞানগর্ভ কাজ।
তাতে আমার মাথাব্যথা নেই— কারণ যা আমার হাতে আছে, শুধু ততটাই নিয়েই আমি কাজ করতে চাই।
🎭 সিসিফসের মতো —
আমি জানি পাহাড়ের চূড়ায় গড়িয়ে পড়া পাথর আবার ঠেলেই তুলতে হবে।
তবুও আমি তাতে বিরক্ত নই।
কারণ এই মুহূর্তেই আমার জীবন,
আর সেই মুহূর্তে যা করছি, সেটাই আমার উদ্দেশ্য।
💬 এখন আমি লিখছি— তাই এই মুহূর্তে লেখাটাই আমার জীবনের উদ্দেশ্য।
কারণ অতীতের মধ্যে আছে স্মৃতি, ভবিষ্যতের মধ্যে কল্পনা—
কিন্তু জীবন কেবলমাত্র এই মুহূর্তেই উপস্থিত।
আমি জানি না ঈশ্বর আছেন কি না, আত্মা আছে কি না।
কারণ এই ধারণাগুলো আমার যুক্তির জগতে সম্পূর্ণরূপে ধরা দেয় না।
তবুও আমি অনুভব করি—
এই বিশাল সৃষ্টি কোনো এক গূঢ় শক্তি দ্বারা পরিচালিত।
যদি সেই শক্তির নাম ঈশ্বর হয়, তবে আমিও সেই শক্তিরই চালিত অঙ্গ।
জীবন আছে মানেই আত্মা আছে— এই বিশ্বাসে আমি তৃপ্ত।
পাপ–পুণ্য?
আমি জানি না তা আসলেই অস্তিত্ব রাখে কিনা,
কিন্তু আমি মানি—
অসৎ কর্মই পাপ।
আমার কারণে কেউ কষ্ট পেলে— সেটাই আমার কাছে পাপ।
আমি বিশ্বাস করি, ঋণ করে মৃত্যু মানেই ফের জন্ম।
অর্থ উপার্জন এমনভাবে হওয়া উচিত যাতে মানুষের শুভকামনাও আসে তার সঙ্গে—
তবেই সেই অর্থ সুখ নিয়ে আসে।
এইসব বিশ্বাস আমার যুক্তি দিয়ে তৈরি নয়।
এগুলো আমার অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির ফসল।
আমি কখনো বিশ্বাসের ওপর বুদ্ধির শাসন চাপাই না।
কিন্তু বুদ্ধির উপর আমার অগাধ আস্থা আছে।
আমি একজন পেশাদার জ্যোতিষী ও হস্তরেখা বিশারদ।
তবে শুধু রাশি বা রেখা পড়ি না,
আমি পড়ি মানুষের মন, আত্মা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দিক।
ধর্ম, দর্শন, মনস্তত্ত্ব— সবই আমার জীবনের সাধনা।
যদি আমার এই চিন্তন, এই বোধ— কারও জীবনের পথ দেখাতে পারে,
তবে সেটাই আমার আত্মতৃপ্তি।
লেখক:
🖋️ Dr. Pradyut Acharya
পেশাদার জ্যোতিষী, হস্তরেখা বিশারদ, দর্শনপ্রেমী ও আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক
🌐 www.myastrology.in
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন