|
Vedant |
বেদান্ত কথার অর্থ হলো বেদে যার অন্ত, অর্থাৎ সব কিছুর প্রান্ত, অনন্তের প্রান্ত | সমস্ত প্রশ্নের উত্তর উপলব্ধি | বেদান্ত সম্বন্ধে বলার মত আমার কোন জ্ঞানই নেই, তবুও আমার সামান্য জ্ঞান দ্বারা, নিজস্ব উপলব্ধি দ্বারা, নিজে যেটুকু বুঝেছি, সেটুকু সকলের সামনে তুলে ধরা ধরার প্রচেষ্টা করছি | বেদান্তে নিজেকে জানার কথা বলা হয়েছে, নিজেকে জানলেই সমস্ত জ্ঞান প্রাপ্তি হয়, তার মনে আর কোন প্রশ্ন থাকে না | এই ঞ্জান শুধুই উপলব্ধি করার বিষয়, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয় | ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বেদের সারাংশ গীতার মাধ্যমে অর্জুনকে বুঝিয়েছে | শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন ব্রম্ভান্ডের সর্বত্রই আমি, সবেতেই আমি আছি |
এই আমি কে? শরীর, আত্মা, না মন, যদি শরীর হই তাহলে শরীরের কোন অংশে আমি আছি? কারণ রেলে কাটা গেছে দুটি পা,তবু বেচে আছে, তাহলে পায়ে আমি নেই | তেমন দুই হাত বাদ যাওয়ার পরও মানুষ বেঁচে থাকে তাহলে হাতেও আমি নেই | আবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশ পরিবর্তন করা হয়, সুতরাং সেসব অংশেও আমি নেই | তাহলে আমি কোথায়?|
আবার মস্তিষ্কে আঘাতের ফলে সমস্ত স্মৃতি মুছে গেল, তবুও মানুষ বেঁচে আছে, কিন্তু তার কিছু মনে নেই | এখানে আত্মা ও মন আলাদা হয়ে গেল | একটা শরীর আছে তাতে প্রাণও আছে শুধু মন নেই, অর্থাৎ স্মৃতি নেই, এ অবস্থায় আমার সুখ নেই, দুঃখ নেই, রাগ নেই, অহংকার নেই | স্মৃতি আমার হলেও স্মৃতি শুধু সময়ের সাথে বয়ে গেছে , কিন্তু আমি সেই স্মৃতি নই | তারপর শরীর ছেড়ে আত্মা বেড়িয়ে গেল, এখন আর আমি নেই | শরীর আছে, আত্মা নেই, অর্থাৎ আমি নেই | তাহলে বোঝাই যাচ্ছে আত্মাই আমি, কিন্তু আত্মা তো অমর, আমি অমর নই | তাহলে আমি কে? | সাধারণত শরীর আত্মা, মন, এই সমস্ত কিছু সমন্বয় হলাম আমি | শরীরও আমি, আত্মাও আমি, মনও আমি | ব্রম্ভান্ডের সমস্ত কিছুর সৃষ্টি এক ধ্বংসও এক | আমাদের সৃষ্টি সামান্য ভ্রুণ থেকে, এই প্রকৃতির দ্বারা আমাদের শরীরের সৃষ্টি, আবার এই প্রকৃতিতে আমাদের শরীর মিশে যায় | বিশ্বের সমস্ত বস্তুও এই প্রকৃতিতে সৃষ্টি হয় আবার ধংস হয়ে প্রকৃতির সাথে মিশে যায় | তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে পৃথিবীর যে কোন বস্তু ও আমার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, সবই প্রকৃতি থেকে সৃষ্টি, আবার প্রকৃতিতে মিশে যায় | তাহলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা মিথ্যে নয় ব্রহ্মান্ডের সবকিছুতেই আমি আছি | আবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছে আত্মার সুখ নেই, দুঃখ নেই, মরন নেই, আত্মাকে জলে ভেজানো যায় না, আগুনে পোড়ানো যায় না | আত্মার কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই তবুও একটা উদাহরণ |
মনে করুন আপনি পেট্রোলের আগুন জ্বালিয়েছেন, আমি খড়ের আগুন জ্বালিয়েছে, আপনার আগুন, আর আমার আগুন আলাদা সেটা মনে হতে পারে, কারণ পেট্রোলের আগুন এর তাপমাত্রা বেশি, খড়ের আগুনের তাপমাত্রা কম | কিন্তু আগুন আলাদা নয়, আমি যখন খড়ের উপর পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন জালালাম, তখন কিন্তু সমস্ত আগুন মিলেমিশে এক হয়ে গেল | সুতরাং আগুন জ্বালাবার বস্তু আলাদা হলেও আগুন কিন্তু একই যেমন আপনি আর আমি আলাদা আলাদা ঠিকই কিন্তু আমাদের আত্মা একই, আমরা সবাই এক | এই আত্মার সম্পর্কে জানার অর্থ, পরমাত্মা সম্পর্কে জানা, এক বার পরমাত্মার সম্পর্কে জানাগেলে, নিজের মধ্যে আর অন্যের মধ্যে তফাৎ থাকে না, তখন সকলই নিজের ভিন্ন রুপ মনে হবে |
আরো একটু সহজ করে বলতে গেলে একই পদার্থ দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি হচ্ছে, তাই তার নাম আলাদা কিন্তু পদার্থ সেই একই | যেমন জল অতিরিক্ত ঠান্ডা হলে বরফ হয়ে যায়, তাহলে কি বলা চলে জল নেই? শুধু সে আলাদা রূপ ধারণ করেছে আবার অতিরিক্ত গরমে জল বাষ্প হয়ে যায়, তাহলে কি বলা যায় যে জল নেই হয়ে গেছে? না বলা যায় না কারণ বাষ্প, জল, বরফ, কিছুই আলাদা নয় তাদের তাপমাত্রা আলাদা হওয়ার কারণে তারা আলাদা আলাদা রূপ ধারণ করেছে | অর্থাৎ যে যেই পরিবেশে যাবে সেই রুপই ধারন করবে | পদার্থ সেই একই ঠিক যেমন আপনি ও আমি, আলাদা আলাদা শরীর ও আলাদা আলাদা পরিবেশে বড় হওয়ার কারণে আমাদের মানসিকতা আলাদা আলাদা তৈরি হয়েছে |
বিজ্ঞানের একটা অন্ত আছে, অর্থাৎ তার একটা লিমিট আছে, যেমন ধরুন জল বাষ্প হচ্ছে আমরা দেখতে পাচ্ছি, তারপরে কি হচ্ছে আমরা দেখতে পাচ্ছি না, বিজ্ঞান একটা যন্ত্র আবিষ্কার করল তা দেখার জন্য, তারা সেই যন্ত্র দ্বারা ও আরো কিছু দূর পর্যন্ত দেখতে পেল, তার পরে তার ক্ষমতা নেই আর কিছু দেখার, অর্থাৎ এটা হল বিজ্ঞানের লিমিটেশন |
কিন্তু সবকিছুর অন্ত বেদের মধ্যেই পাওয়া যায়, যেমন বিজ্ঞান যে যন্ত্র আবিষ্কার করল সেটা কোথা থেকে এল, স্বাভাবিকভাবেই সেটা কোন মানুষের মনে একটা চিন্তা এলো, সেই চিন্তা সম্পর্কিত কিছু পদার্থ একত্রিত করা হলো এবং একটা জিনিস আবিষ্কার করলো | তাহলে আবিষ্কারের উৎস ওই চিন্তা, চিন্তা অর্থাৎ ধ্যান, তাই বেদান্তে অনেক আগেই বলেছে ধ্যানের মাধ্যমেই পরমাত্মার সঙ্গে সম্পর্ক করা যায়, এবং সেখান থেকে সমস্ত জ্ঞানের প্রার্থী সম্ভব |
বেদ সম্পর্কে কোন জ্ঞান আমার নেই তবুও নিজের উপলব্ধি আপনাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করে দেবেন |
Astrologer
Prodyut Acharya
Mobile 9333122768
অন্যান্য
জ্যোতিষ শাস্ত্র কি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন