যে কাজগুলো করে আপনি শনিদেবের অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে পারেন


শনিদেব 
যখনই মানুষের সময় খারাপ চলে মানুষকে বলতে শোনা যায় শনির দশায় ধরেছে ।
দশা অন্তর্দশা সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান থাক বা নাই থাক এ কথা সত্য যে শনিদেব কে নিয়ে ভয় ভীত প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই রয়েছে|
শনিদেবের অশুভ প্রভাবে মানুষের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়| জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী শনিদেব হল সর্বাধিক পাপ গ্রহ, কিন্তু এই শনিদেব আবার ভাগ্যপতি ও কর্মফল দাতা| শনি দেব কে দন্ড নায়ক অর্থাৎ দন্ডাধিপতি ও বলা হয়|
জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে জন্ম কুণ্ডলীতে শনি যে ঘরে অবস্থান করে, সেই ঘর সম্পর্কিত এবং তার তৃতীয়, সপ্তম, ও দশম দৃষ্টি দ্বারা, তৃতীয়, সপ্তম, দশম ঘর থেকে যেই ফল পাওয়া যায় সেই ফল সম্পর্কিত বহু সমস্যার সৃষ্টি করে|

যেমন যদি কোন মানুষের লগ্নে শনি অবস্থান করে তাহলে তার জীবনের সমস্ত কিছুই অত্যন্ত ধীরগতিতে হয়, অর্থাৎ আপনার জীবনের সব কিছুই হতে পারে কিন্তু যখন চাইবেন তখন পাবেন না, পাওয়ার জন্য আপনাকে অনেক বাধা-বিঘ্ন ও সমস্যার মধ্য থেকে নিজের চেষ্টার মাধ্যমে অর্জন করে নিতে হবে|

অন্যান্য করতলে অর্ধচন্দ্র রেখা থাকলে অবশ্যই জেনে নিন 

এবং তৃতীয় দৃষ্টি দ্বারা তৃতীয় ঘরকে দেখার কারণে, কুন্ডলীর তৃতীয় ঘর সম্পর্কিত ফলের ও অনেক সমস্যা বৃদ্ধি পাবে, যেমন আপনার পরাক্রম বৃদ্ধি পাবে, অর্থাৎ আপনাকে অনেক সংঘর্ষ করতে হবে, আপনার মনোযোগের অভাব ঘটবে, আপনার ভাইদের সম্পর্ক খারাপ হতে পারে |

সপ্তম দৃষ্টি দ্বারা সপ্তম ঘরকে দেখার কারণে কুণ্ডলীর সপ্তম ঘর সম্পর্কিত অর্থাৎ অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ, ব্যবসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা, পার্টনারের সঙ্গে মনোমালিন্য, দাম্পত্য জীবনে কলহ সৃষ্টি হতে পারে|

এবং দশম দৃষ্টিদ্বারা দশম ঘরকে দেখার কারণে আপনার কর্ম ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা সৃষ্টি করবে, আপনাকে বিভিন্ন বাধা বিঘ্নের সম্মুখীন হতে হবে|
এই ভাবেই  দ্বাদশ ভাবের ফল আলাদা আলাদা হবে |

আবার হস্তরেখা অনুযায়ী শনির ক্ষেত্রই ভাগ্য ক্ষেত্র, আর শনি রেখাকে ভাগ্য রেখা বলে |
সুতরাং হাতে শনির ক্ষেত্র খারাপ থাকলে ও মানুষের অনেক প্রচেষ্টার পরও ভাগ্যন্নোতি হয় না জীবনে প্রতি পদে বাধা বিঘ্নের সন্মুখীন হতে হয় |
আবার শনির দশা বা শনির সাড়ে সাতি শুনতেই, মানুষের মধ্যে একটা ভয় ভীতির সৃষ্টি হয়| কারণ শনির দশায় ও শনির সাড়ে সাতিতে, মানুষের জীবনে অনেক সমস্যা ভোগ করতে হয়|

তাহলে এখন প্রশ্ন আসতে পারে শনিদেব কি শুধু খারাপ ফল ই প্রদান করে? আসলে তেমনটিও ঠিক নয়|
শনি দেব যে ঘরে অবস্থান করে, এবং যে ঘরগুলোতে দৃষ্টি দেয়, সেই ঘর সম্পর্কিত ফল পেতে, মানুষকে অনেক পরিশ্রম এবং অনেক বাধা-বিঘ্ন জটিলতার মধ্য দিয়ে অর্জন করতে হয়|

শনিদেব বহু সমস্যা এবং বাধার মধ্যে ফেলে, সেই মানুষকে সেই ফলের জন্য যোগ্য মানুষ গড়ে তোলে|
মানুষের অহংকার চূর্ণ করে|
শনিদেবের অশুভ প্রভাব থাকলে মানুষের রোগ বৃদ্ধি, ঋণ বৃদ্ধি, শত্রু বৃদ্ধি, এবং বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন রকম বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি হয়|

তো আসুন জেনে নেওয়া যাক কি কাজ করলে শনিদেবের অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে|

অন্যান্য আপনার বুড়ো আঙুল আপনার সম্বন্ধে কি বলছে 

১) শনিদেব শিবের উপাসক, তাই প্রতি সোমবার শিবের উপাসনা করলেন শিবকে বেলপাতা ও শিবের মাথায় জল দিয়ে পুজো করলে, শনির অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে |

২) শনিদেবের গুরু হল দক্ষিণা কালী| প্রতি শনিবার দক্ষিণা কালীর পুজো করলে আপনি শনিদেবের অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে পারেন|

৩) পুরাণ অনুসারে শ্রী হনুমান জি ভগবান শিবের অবতার| আবার একথাও জানা যায় মেঘনাত এর জন্ম সময় রাবণ সমস্ত গ্রহদের একাদশে বন্দী করেন, তা শনি দেব মেনে নিতে পারে না| কারণ সমস্ত গ্রহ সঙ্গে যদি শনি একাদশে অবস্থান করে| তাহলে মেঘনাথ পরাক্রমি, শক্তিশালী এবং অজয় হবে| তাই শনিদেব হনুমানের সাহায্য চায়| হনুমান রাবণের থেকে শনি কে ছাড়িয়ে দ্বাদশে নিয়ে যায়| তখন থেকে শনিদেব হনুমান জি কে কথা দেয় যে হনুমানজির ভক্তদের শনির দ্বারা কোনো অশুভ প্রভাব পড়বে না | তাই প্রতি মঙ্গলবার হনুমান জির আরাধনা করে তাকে লাড্ডু চড়িয়ে আপনি শনির অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে পারেন|


৪) পুরাণ অনুসারে সূর্যপুত্র শনি ও যম এই দুজনকে দন্ড প্রতি অর্থাৎ ন্যায়াধীপতি বলা হয়েছে| শনিদেব মানুষের জীবদ্দশায় এবং যমরাজ মানুষের মৃত্যুর পরে তার কর্মফল প্রদান করে| অর্থাৎ যারা অসৎ কর্ম করে, অসৎ পথে চলে, তাদের শনিদেবের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া মুশকিল, সুতরাং সৎপথে চলে, সৎকর্ম করে, আপনি শনিদেবের অশুভ প্রভাব থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন|


অন্যান্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে যে বিষয়ে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন

৫) জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী শনিদেব দাসত্বের কারক গ্রহ| তাই দুর্বল মানুষকে সাহায্য করলে| সাহায্য অর্থাৎ দান নয় কারণ শনিদেব দান গ্রহণ করে না, চায় নিজের অধিকার| তাই দুর্বল মানুষ বা নিম্নবিত্ত মানুষের সহযোগিতা করে ও আপনি শনির অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে পেতে পারেন| আবার জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী শনিদেব কে অতি বৃদ্ধ বলা হয় তাই বৃদ্ধ মানুষের সেবা করে, তাদের থেকে আশীর্বাদ নিলেও শনিদেবের অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়|

৬) প্রতি শনিবার নিরামিষ আহার, এবং কুকুরকে খাবার খাইয়ে, বিশেষ করে কালো কুকুর কে খাবার খাইয়ে, শনিদেবের অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় |

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভাদ্র মাসে জন্ম হলে মানুষ কেমন হয়

শ্রাবণ মাসে জন্ম হলে মানুষ কেমন হয়

হাতের আয়ু রেখা বিচার