সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এই বিষয়ে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন

সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করলে 

মানুষের জীবনে ধন সম্পদ, অর্থকড়ি'র পাশাপাশি, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সম্পর্ক| বা একথাও বলা যায় ধন সম্পদ অর্থ কড়ি থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সম্পর্ক| কারণ আপন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না থাকলে, হাজার মানুষের মধ্যেও নিজেকে একা মনে হয় | একটি সম্পর্ক সুন্দর ভাবে টিকিয়ে রাখতে গেলে উভয় পক্ষেরই কিছু আত্ম ত্যাগ করতে হয়| কিন্তু সমস্যাটা হলো আপনি তো আর উভয় পক্ষ হতে পারছেন না, আপনি শুধু আপনি | আপনি সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য অনেক আত্মত্যাগ করছেন বা আপনার ভালোবাসার মানুষটা কে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু সে কোন আত্ম ত্যাগ করতে রাজি নয়, সে আপনার কথা শুনতে বা বুঝতেও চাইছে না, তখন আপনার রাগ বৃদ্ধি পাবে,  সম্পর্ক আরো তলানির দিকে যাবে | এই ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতির মধ্যে কি করবেন? সম্পর্ক ছিন্ন করে দেবেন?অন্যান্য পন্ডিত শীলা রুপা গোস্বামী যে বিষয়গুলোর অভাব মানুষের মধ্যে লক্ষ্য করেছিলেন|

আমরা সমাজে অনেক পরিবারে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কারণে পরিবার বিচ্ছিন্ন হতে দেখে থাকি, যেমন পিতা পুত্রের সম্পর্ক, ভাই ভাই এর সম্পর্ক, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক, এবং আরো অনেক সম্পর্ক | কখনো বোঝার চেষ্টা করি? যে কি কারনে এ সম্পর্ক গুলো ভেঙে যাচ্ছে? সুতরাং সম্পর্ক যদি টিকিয়ে রাখতে হলে আপনাকে একাই চেষ্টা করে যেতে হবে, কেননা অপরপক্ষে মানুষটিকে আপনি কখনোই বোঝাতে সক্ষম হবেন না | গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, কামনাতে ক্রোধ আসে | আমাদের সমস্ত সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কারণ, শুধু অপর পক্ষের মানুষের আচারণ টুকুই নয়, আমাদের রাগ এবং ইগো | এই রাগ সৃষ্টি হয় আমাদের কামনাতেই, অর্থাৎ চাওয়া না পাওয়ায় পরিণত হওয়ার কারণে | আপনি অপরপক্ষের থেকে যা চাইছেন, বা তার কাছ থেকে যা আশা করছেন, তা পাচ্ছেন না সেই কারণে, আপনার ক্রোধের সৃষ্টি | যেমন ধরুন আপনার মনের আশা ভালো মাছ খাবেন, আপনি বাজার থেকে ভালো মাছ কিনে আনলেন, কিন্তু কোন কারণবশত, আপনার মা, বোন, বা স্ত্রী, রান্নাটা ভাল করতে পারলো না, রান্না করা মাছ আপনি মুখে তোলা মাত্রই আপনার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, আপনি চিল্লামিল্লি করতে শুরু করে দিলেন, এত পয়সা দিয়ে মাছ এনেছি রান্নাটা একটু ভালো করে করতে পারলে না, রান্নাটা কি কারনে ভালো হয়নি সেটা বোঝার চেষ্টাও করলেন না|আবার ধরুন, আপনি কোন কাজ কাউকে দিয়েছেন, সেই কাজটা সে সম্পূর্ণ করতে পারল না, আপনার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, আপনি চিল্লামিল্লি করতে শুরু করলেন, যে একটা কাজ দিয়েছে সেটাও ঠিক ভাবে সম্পূর্ণ করতে পারলে না, কি কারনে সম্পূর্ণ করতে পারল না আপনি সেটা বোঝার চেষ্টা করলেন না| আমি দুটো ঘটনার উদাহরণ দিলাম এই ধরনের হাজারো ঘটনা হতে পারে| এখন লক্ষ করার বিষয় হলো প্রথম গল্পের ঘটনাটা দেখলে বোঝা যাচ্ছে যে আপনি শখ করে মাছ এনেছেন, রান্না তাকে দিয়ে করিয়েছেন যে রান্না করতে পারে না, এক্ষেত্রে মাছ ভালো রান্না না হওয়ার জন্য দায়ী আপনি| অথবা সে খুবই ভাল রান্না করতে পারে কিন্তু কোন কারণবশত এই রান্নাটা ভাল হয়নি সেটা আপনি বোঝার চেষ্টা করলেন না এক্ষেত্রেও দায়ী আপনি|দ্বিতীয় ঘটনা দেখলে বোঝা যায় যে আপনি একটা কাজের দায়িত্ব, সেই মানুষটাকে দিয়েছেন যার কোন দায়িত্ব জ্ঞান নেই, সে ক্ষেত্রে কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ার জন্য দায়ী আপনি| অথবা সে একজন দায়িত্ববান মানুষ, কোন কারণবশত কাজ সম্পূর্ণ করতে পারলো না, সেটা আপনি বোঝার চেষ্টাও করলেন না, সেক্ষেত্রেও দায়ী আপনি| আমি দুটো ঘটনার মাধ্যমে বোঝাবার চেষ্টা করলাম, যে আমাদের কোন চাওয়া না পাওয়ায় পরিণত হলে রাগের সৃষ্টি হয়, তখনই সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করে| সুতরাং নিজের দৃষ্টিভঙ্গি যদি বদলানো যায় তাহলে রাগ করার প্রবণতা অনেক কমে যায়| আর মানুষের রাগই যদি না থাকে তাহলে সম্পর্ক ভাঙ্গার কোন প্রশ্নই আসে না| সে ক্ষেত্রে আপনার একার প্রচেষ্টায়ও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব| কারণ এই জিনিসগুলো আপনি বুঝলেও আপনার অপরপ্রান্তের মানুষটিকে কখনোই বোঝাতে পারবেন না| আবার অনেক সময় মানুষের কথা মানুষের মনে গেঁথে যায়, কখনোই ভুলতে পারে না| মানুষ যখন রাগ করে তখন তার, আচরণ ও মুখ থেকে বেরোনো প্রতিটি বাক্য খারাপ হয়ে থাকে, তার নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল হবার সম্ভাবনা বেশি হয় | 

অন্যান্য গীতার অন্য রকম ব্যাখ্যা 

আর এই রাগের বশে মানুষ, মানুষের সঙ্গে এমন কিছু আচরণ করে এমন কিছু ভাষার প্রয়োগ করে সে কখনো ভোলার মত নয়| কিন্তু আপনি যদি রাগ না করার অভ্যাস করে থাকেন তাহলে আপনার কাছে মনে রাখার মত কিছুই থাকবে না| কারণ আপনি বোঝেন যে মানুষ যা বলেছে রাগের মাথায় বলেছে | আবার কিছু মানুষের মুখে শোনা যায় রাগ উঠলে আমি নিজেকে সামলাতে পারিনা | তারা নিজেকে একবার প্রশ্ন করবেন, যে ঈশ্বর না করুক এর থেকেও বড় সমস্য জীবনে আসে তখন আপনি কি করে সামলাবেন? আপনার তো সামান্য সমস্যা তে রাগারাগি করার অভ্যাস | সেই কারণেই সম্পর্ক যদি টিকিয়ে রাখতে হয়, তাহলে রাগ করা কমাতে হবে | স্বামী বিবেকানন্দ, তিনি একবার জেলে, আসামিদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, সেখানে অনেক আসামিদের সঙ্গে কথা বলে তিনি বুঝতে পারলেন, যে সকল আসামি খারাপ মানুষ নয়, কেউ কেউ জ্ঞানী মানুষও আছেন| তাহলে তারা জেলে বন্দি কেন? সুতরাং ভালো মানুষও রাগের বশে এমন কিছু কর্ম করে ফেলে, যা তাদের সম্পূর্ণ জীবনটাকে নষ্ট করে দিতে পারে |

মানুষের সহনশীলতা কমে যাচ্ছে, সহনশীলতা বৃদ্ধি করবার প্রয়োজন, মা সারদা দেবীও বলেছেন যে-সয় সে-রয়, সুতরাং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গেলে, সহনশীলতা প্রয়োজন, কথায় কথায় রাগ ও ইগো দেখালে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়| আজকের লেখা এই পর্যন্তই নমস্কার

অন্যান্য স্বভাব পরিবর্তন করলে জীবন পরিবর্তন হয়

Astrolger and palmist 

Dr. Pradyut Acharya

Contact +91 9333122768