|
Body immunity |
পৃথিবীর প্রাচীন দেশগুলোর মধ্যে ভারতবর্ষ একমাত্র দেশ, যে দেশ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মোকাবেলা করেও এখনো টিকে আছে | টিকে আছে ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতি, যে সংস্কৃতি বর্তমানে আমরা ভুলতে বসেছি | যখন আমরা নিজেদের সংস্কৃতি ভুলে বিদেশি সংস্কৃতিকে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি | ঠিক সেই সময় করোনা নামের এক অদৃশ্য শত্রু পৃথিবীর উপরে হামলা করে, গোটা বিশ্ব মহামারীর আকার ধারণ করে | এই মহামারী থেকে রক্ষা পেতে পৃথিবীর সমস্ত দেশের, সমস্ত ধর্মের মানুষ ভারতীয় সংস্কৃতি মেনে চলেছে | এই ভাইরাসের আতঙ্কে বিভিন্ন দেশের রীতিনীতি যেমন আলিঙ্গন, হ্যান্ডশেক, চুম্বন, ইত্যাদি নিয়ম ত্যাগ করে, ভারতীয় পদ্ধতি নমস্কারে বিশ্বাস রাখছে, এবং তারা মৃতদেহ সৎকারেও ভারতীয় পদ্ধতি শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন | বিশেষজ্ঞরা ঘোষণা করেছে আলিঙ্গন, হ্যান্ডশেক, চুম্বন, ইত্যাদি দ্বারা করোনা ভাইরাস সহ বিভিন্ন রোগ জীবাণু ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস ইত্যাদির সংক্রমনের ঝুঁকি অনেক বেশি | তাই এই ধরনের সংক্রমণ গুলোকে এড়াতে ভারতীয় পদ্ধতি নমস্কার সবচেয়ে বেশি উপযোগী | মৃতদেহ সমাধি বা অন্য কোন সৎকারের মাধ্যমে, মৃতদেহের সঙ্গে জীবাণু, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, বহুদিন বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু মৃতদেহ দাহ্য করার মাধ্যমে এই ঝুঁকি আর থাকে না |
বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান উন্নতির চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানও বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসা ক্ষেত্রে, বিভিন্ন মারণ রোগের হাত থেকে মানুষকে বাঁচিয়ে তুলছে | প্রাচীনকালে এই ধরনের প্রযুক্তি ছিলনা, তাই যে সমস্ত অস্ত্রোপচার আজকের দিনে সম্ভব, তা প্রাচীনকালে অসম্ভব ছিল | কিন্তু প্রাচীনকালে যা ছিল তার বেশিরভাগ বিলুপ্ত হয়ে গেলেও কিছু অংশ এখনো আছে | যেমন বেদ, অথর্ববেদের যে অংশে বিভিন্ন উদ্ভিদ দ্বারা বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা ও মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, সুস্থ থাকার আলোচনা করা হয়েছে তাকে বলা হয় আয়ুর্বেদ | আয়ু অর্থ জীবন, বেদ অর্থ জ্ঞান, অর্থাৎ জীবনের জ্ঞান, বা আয়ুর জ্ঞান | আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী বিভিন্ন উদ্ভিদ আমরা বিভিন্ন চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করতে পারি, এবং খাদ্য উপযোগী উদ্ভিদ ফলমূল সেবন করে আমরা সুস্থ সবল থাকতে পারি | কিছু বিজ্ঞানী কয়েক বছর আগে এই শাস্ত্রের কটাক্ষ করে বলেছেন, নিরামিষ অর্থাৎ গাছগাছালি ধরনের খাদ্য খাবার খেয়ে মানুষ দুর্বল ধরনের হয় | কারণ এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ইত্যাদি থাকে না, মাছ-মাংস ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে |
কিন্তু আজ বিজ্ঞান অনেক দেরীতে হলেও নিজের সিদ্ধান্ত বদলেছে|
নভেল করোনাভাইরাস এর উৎস স্থল, চীনের বুহান শহর, যেখানে একটি বাজারে বিভিন্ন ধরনের পশু পাখি, সাপ, ইঁদুর, বাদুড়, সমস্ত কিছুর মাংস বিক্রি করা হয় | সেখান থেকে প্রথমে কোন একজন ব্যক্তি এই ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হয়, কিছুদিনের মধ্যে আরো কিছু মানুষ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাদের চিকিৎসার জন্য যে ডাক্তারের কাছে পাঠানো হয়, সে ডাক্তার তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এক নতুন ভাইরাস আবিষ্কার করে | তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারে মানুষের শরীরে এই ভাইরাস খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করে, তিনি খুবই আতঙ্কিত হন, আর সকল ডাক্তারদের বিষয়টি জানান এবং সকলকে সতর্ক করে | এই খবর হাওয়ার গতিতে প্রচার হওয়ার মাধ্যমে বহু মানুষ আতঙ্কিত হয় | তখন চীন প্রশাসন ওই ডাক্তারকে আতঙ্ক ছড়ানোর দায়ে, জেলে বন্দি করে | কিছুদিনের মধ্যেই করোনা ভাইরাস বুহান শহরে মহামারীর সৃষ্টি করে, ওই ডাক্তার সংক্রমিত হয়ে জেলে বন্দী অবস্থায় মারা যায় | এই ভাইরাস বুহান শহর থেকে সমস্ত চিনে, চিনে থেকে সমস্ত বিশ্বে ছড়িয়ে, বিশ্ব আতঙ্ক সৃষ্টি করে | এবং প্রায় গোটা বিশ্বকেই লকডাউন করে দেয় |
বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে কিছু তথ্য উঠে আসে, যেমন এই ভাইরাসের জেনেটিক কোড অনেকাংশে বাদুর, অনেকাংশে কোবরার সঙ্গে মিল আছে, কারো মতে কোবরা ও বাদুড়ের জেনেটিক কোডের সংমিশ্রণে এই ভাইরাসের সৃষ্টি, আবার কারো ধারণা চীন দেশের বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের সৃষ্টি করেছে, তবে এগুলো ধারণামাত্র এর কোনো সঠিক প্রমাণ নেই | কিন্তু কিছু বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যেমন কোনো মানুষ এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েও সে বুঝে উঠতে পারছে না যে সে সংক্রমিত, বোঝার জন্য 2 থেকে 14 দিনের সময় লাগছে | কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি যত মানুষের সংস্পর্শে আসছে তাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে | যার শরীরে ইমিউনিটি পাওয়ার, অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা জীবনীশক্তি বেশি থাকে, এই ভাইরাস তাকে খুব বেশি কাবু করতে পারছে না | সামান্য কিছু উপসর্গ দেখা দিয়ে ভাইরাস নিজে থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে | যাদের ইমিউনিটি পাওয়ার একটু কম তারা কিছু চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হচ্ছেন | এবং যাদের ইমিউনিটি খুব কম তারা মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে |
তাই এই ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন | চীন দেশের গবেষকরা এই ভাইরাসের মোকাবিলা ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য, খাদ্য উপযোগী উদ্ভিদ, ফলমূল জাতীয় খাবারের, সেবন করার পরামর্শ দিয়েছে | বিশেষজ্ঞদের মতে মানুষের শরীরের জেনেটিক কোড এবং বিভিন্ন পশু পাখির জেনেটিক কোড আলাদা ধরনের হয়ে থাকে | কিছু কিছু প্রাণীর জেনেটিক কোড মানুষের জেনেটিক কোডের থেকেও বেশি শক্তিশালী হয় | তাই ঐসব প্রাণীর মাংস খেলে তাদের জেনেটিক কোড, মানুষের শরীরের জেনেটিক কোডের সঙ্গে সহজে মিল হয় না | ফলে শরীরের বেশিরভাগ কেমিক্যাল বা জীবনীশক্তি, ঐসব খাদ্য খাবার শরীরের উপযোগী করে, তুলতে ব্যয় হয়ে যায়, তাই শরীর অন্য জীবাণু বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে, তার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকে না | কিন্তু উদ্ভিদ বা ফল-ফলাদি জাতীয় খাবারের মধ্যে জেনেটিক কোড খুব সরল হওয়ার দরুন, মানুষের শরীরে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যায়, তার জন্য শরীরের অতিরিক্ত কোন কেমিক্যাল বা জীবন শক্তি ব্যয় করতে হয় না | ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা জীবনি শক্তি বৃদ্ধি হয় |
ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্র এই পরামর্শ প্রাচীনকাল থেকেই দিয়ে আসছে | গোটা পৃথিবীতে যখন নভেল করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, ঠিক এই দুঃসময় পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশগুলো ভারতীয় শাস্ত্রের পদ্ধতি মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে | ভারতীয় শাস্ত্র এখানেই শেষ নয়, আরো বহু কিছু আছে যা সমস্ত বিশ্বকে পথ দেখাতে পারে, যেমন যোগশাস্ত্র | আমরা আয়ুর্বেদ শাস্ত্র ও যোগশাস্ত্রের নিয়ম মেনে খুব ভালোভাবে এই ভাইরাসের মোকাবেলা করতে পারি | আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী প্রকৃতিক খাদ্য অভ্যাসের সাথে, যোগা, মেডিটেশনের মাধ্যমে আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারি | এছাড়াও এই ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে, সংক্রমণ যাতে বৃদ্ধি না হয় তাই সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে | অতি অবশ্যক কোনো প্রয়োজন না থাকলে বাড়ির বাইরে না যাওয়াই বুদ্ধি মানের কাজ | ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি, সংক্রমণ সংখ্যা দ্রুত বেগে বেড়ে চলেছে | সুতরাং সামান্য একটু ভুলের কারণে নিজের পরিবার সহ সমাজের অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে | সকলেই সাবধান ও সচেতন থাকুক, অনুগ্রহ করে নিজের ঘরে থাকুন নমস্কার |
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন