শত্রুর দ্বারে ভিক্ষা: বিবেক বাবুর হৃদয় গলে যাওয়া – পঞ্চম অংশ

ভুবন শেঠ ঝুলি নিয়ে বিবেক বাবুর বাড়ির গেটের কাছে দাঁড়িয়ে”
MyAstrology Ranaghat 

 

চিরশত্রুর দ্বারে ভিক্ষা: অহংকার ভাঙার মহাপাঠ

লেখক: প্রদ্যুত আচার্য
পেশা: জ্যোতিষী ও হস্তরেখাবিদ, দার্শনিক চিন্তাবিদ

পরদিন ভোরে ভুবন শেঠ আবারও ভিক্ষার বসন পরিধান করে বেরোলেন। কাঁধে ঝুলি, চোখে অদ্ভুত এক সংকল্প, অন্তরে ভরা ভয় আর প্রত্যয়ের এক অদ্ভুত মিলন। গ্রামের পথ পেরিয়ে তিনি এবার ছুটলেন সোজা বিবেক বাবুর প্রাসাদের দিকে।

প্রাসাদের ফটকে দারোয়ান তাঁকে দেখে হতবাক।

“এ কী! ভুবন শেঠ আপনি! ভিক্ষুকের বেশে কেন?”

খবর মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছল বিবেক বাবুর কানে। ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি দোতলা থেকে ব্যালকনিতে ছুটে এলেন। প্রথমে চিৎকার করে বললেন—

“ধরো! এই ভণ্ডকে বেঁধে রাখো!”

কিন্তু যখন তাঁর চোখ পড়ল ভিক্ষুকের বেশে দাঁড়ানো ভুবন শেঠের উপর, তখনই যেন পৃথিবী থমকে গেল।
অভিমানী প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, তিনি দেখলেন এক ভগ্ন অহংকারহীন মানুষ—ঝুলি পেতে দাঁড়িয়ে আছে তাঁর দয়ার আশায়।

বিবেক বাবুর শরীর কেঁপে উঠল। তাঁর অহংকার, ক্রোধ মুহূর্তেই গলে গেল। ব্যালকনি থেকে দৌড়ে নেমে এসে ভুবন শেঠকে বুকে জড়িয়ে ধরে তিনি কেঁদে ফেললেন। কাঁপা গলায় বললেন—

“বন্ধু, এ কী অবস্থা তোর? তুই আমার দ্বারে ভিক্ষার ঝুলি পেতে দাঁড়িয়ে আছিস?”

ভুবন শেঠ অশ্রুসিক্ত চোখে ধীরে ধীরে সব কথা খুলে বললেন—

কাজের মেয়ের সেই কথাটি থেকে শুরু করে বন্ধুর পরামর্শ, গুরুদেবের শর্ত, নিজের অহংকার ভাঙার সংগ্রাম—সব কিছু।

বিবেক বাবু দীর্ঘক্ষণ নীরবে শুনলেন। তারপর মৃদু কণ্ঠে বললেন—

“ভুবন, আমার কাছে দেবার মতো ধন নেই। যা আছে, তা হলো আমার হৃদয়। যদি তুই গ্রহণ করিস, তবে আমি নিজেকেই সমর্পণ করব তোকে।”

এইভাবে চিরশত্রু দুই প্রাণ এক অদ্ভুত ভিক্ষার বন্ধনে বাঁধা পড়ল।
ভুবন শেঠ ও বিবেক বাবুর আলিঙ্গনে চারিদিকে যেন অদ্ভুত এক নীরব আলো ছড়িয়ে পড়ল।
দুই শত্রুর হৃদয়ে জমে থাকা বরফ গলে গেল। যেখানে ছিল প্রতিযোগিতা, বিদ্বেষ আর অহংকার—সেইখানে জন্ম নিল ভ্রাতৃত্ব, ক্ষমা এবং এক অদ্ভুত শান্তি।

বিবেক বাবু ধীরে ধীরে ভুবন শেঠের হাত ধরে বললেন—

“বন্ধু, আসো। আজ থেকে আমরা কেউ কারও প্রতিদ্বন্দ্বী নই। আমরা দু’জনেই যাত্রী—একই সত্যপথের।”

এই মুহূর্তে ভুবন শেঠ বুঝলেন—আত্মসমর্পণ, ক্ষমা এবং অহংকার ত্যাগ করা ছাড়া প্রকৃত মুক্তি অসম্ভব। ধন-সম্পদ, ব্যবসায়িক প্রভাব বা সমাজের সম্মান—কিছুই অন্তরের শান্তি দিতে পারে না। প্রকৃত শক্তি আসে নিজের হৃদয়কে বিনম্রতার আলোয় ধোয়া এবং শত্রুর দ্বারে দয়া চাওয়া থেকে।


পূর্ববর্তী অংশ   পরবর্তী অংশ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভাদ্র মাসে জন্ম হলে মানুষ কেমন হয়

শ্রাবণ মাসে জন্ম হলে মানুষ কেমন হয়

হাতের আয়ু রেখা বিচার