ভিক্ষার পথে: অহংকারের প্রতিটি স্তর ধ্বংস – চতুর্থ অংশ
![]() |
My Astrology Ranaghat |
ভুবন শেঠের চূড়ান্ত পরীক্ষা: চিরশত্রুর দ্বারে ভিক্ষা
লেখক: প্রদ্যুত আচার্য
পেশা: জ্যোতিষী ও হস্তরেখাবিদ, দার্শনিক চিন্তাবিদ
অবশেষে নির্ধারিত দিনে ভুবন শেঠ গুরুদেবের কাছে পৌঁছালেন। ভিক্ষা সংগ্রহের ঝুলি কাঁধে, চোখে গভীর বিনম্রতা, তিনি প্রণাম করে বললেন—
“গুরুদেব, আপনার আদেশ মতো ভিক্ষা সংগ্রহ করে এনেছি। দয়া করে আজ আমাকে দীক্ষা দিন।”
গুরুদেব ধীরচিন্তায় ঝুলির দিকে তাকালেন। একটি মুহূর্ত নীরবতার পর তিনি হাত বাড়িয়ে সমস্ত দ্রব্য স্পর্শ করলেন। তারপর শান্ত অথচ কঠিন কণ্ঠে বললেন—
“না ভুবন, দক্ষিণা পূর্ণ হয়নি। তুমি এখনো সম্পূর্ণ ভিক্ষা জোগাড় করতে পারোনি।”
এই এক বাক্যে ভুবন শেঠ যেন বজ্রাহত। আশ্রমে উপস্থিত অন্য শিষ্যরাও হতভম্ব। ভুবনের অন্তর কেঁপে উঠল—সে জানত সমস্ত গ্রামের দ্বারেই ভিক্ষা চেয়েছে, তবু একমাত্র দরজায় ঝুলি পাততে পারেনি। সেই দরজার পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন—চিরশত্রু বিবেক বাবু।
অতীতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অহংকার, গর্ব—সবকিছু যেন এক সূক্ষ্ম সুতোয় বাঁধা। সেই সুতো ভাঙতে না পারা ভুবনকে এখনও পূর্ণ মুক্তি থেকে বঞ্চিত করছিল। তাঁর অন্তর জানল, শেষ পরীক্ষা এখনো বাকি।
ভুবন শেঠ গভীর বিনম্রতায় গুরুদেবের পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইলেন—
“গুরুবর, আমি জানি কোথায় আমার অভাব হয়েছে। আমাকে একটু সময় দিন। আমি আমার অহংকারের শেষ বাঁধনটিও ছিন্ন করব।”
গুরুদেব চোখ মেলে ভুবনের দিকে তাকালেন। এক মুহূর্তের নীরবতার পর তিনি ধীরে বললেন—
“যাও ভুবন। যে দ্বারে তোমার হৃদয় কাঁপছে, যে স্থানে তোমার অহংকারের শেষ প্রাচীর দাঁড়িয়ে আছে, সেইখানেই তোমার মুক্তির পথ।”
এই মুহূর্তটি ছিল ভুবনের জন্য এক অনন্য শিক্ষা। তিনি বুঝলেন, আন্তরিক আত্মসমর্পণ এবং চিরশত্রুর দ্বারে দায়িত্বপূর্ণ ভিক্ষা করাই প্রকৃত মুক্তির চাবিকাঠি। ধন-সম্পদ, ক্ষমতা বা প্রভাব নয়—সর্বশেষ মুক্তি আসে শুধুমাত্র নিজের অহংকার ভাঙার মাধ্যমে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন