অসুখী ধনকুবের: ভুবন শেঠের অন্তরের খোঁজ – প্রথম অংশ
![]() |
MyAstrology Ranaghat |
ভুবন শেঠের অন্তরের যাত্রা: ধন, অহংকার ও জীবনের আসল কাজ
লেখক: প্রদ্যুত আচার্য
পেশা: জ্যোতিষী ও হস্তরেখাবিদ, দার্শনিক চিন্তাবিদ
ভুবন শেঠ ছিলেন এক প্রসিদ্ধ ও দয়ালু ব্যক্তি—তাই নামটি শুনলেই চারিদিকে এক অদ্ভুত শ্রদ্ধার সঞ্চার হতো। তিনি ছিলেন অপার ধন-সম্পদের মালিক; রূপা-সোনা, হীরক-মুক্তা যেন তার জীবনের প্রতিদিনের খেলনা। তবুও, অসহায় মানুষদের সহযোগিতা ও দানে তার অন্তহীন আগ্রহ তাকে আলাদা পরিচয় দিয়েছিল। বৃহৎ ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য, শত শত কর্মচারীর আনাগোনা, রাজসভায় প্রভাব—সবকিছুতে ভুবন শেঠের উপস্থিতি অনুভূত হতো।
তবুও, ভুবন শেঠের অন্তরে শান্তি ছিল না। ধন-সম্পদ মানুষের চোখে মর্যাদা আনে, কিন্তু নিজের ভিতরের শূন্যতাকে ঢাকতে পারে না। ভুবন শেঠ দিন-রাত অস্থিরতায় ভুগতেন। বিশেষত, তাঁর জীবনের এক অদৃশ্য শূল ছিল—বিবেক বাবু। এক সময় বন্ধু, পরে প্রতিদ্বন্দ্বী। এই সম্পর্কের প্রতিযোগিতাই যেন তার নিশ্বাসকে বিষিয়ে তুলেছিল। অর্থে সমান, প্রভাবে সমান, অথচ একে অপরকে হারানোর লোভে দু’জনেই যেন অর্ধেক জীবন পুড়িয়ে ফেলেছিলেন।
একদিন ব্যবসার কাজ সেরে ভুবন শেঠ ক্লান্ত দেহে শয্যায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। বাইরের আকাশ শান্ত, তবুও মনের ভেতর ঝড়। ঘরে নিরবতা, কিন্তু অন্তরে যেন হাজার প্রশ্নের কোলাহল। সেই সময় হঠাৎ তার কানে এলো কাজের মেয়েটির কথা—
সে অন্য এক সঙ্গিনীর সঙ্গে আড়ালে বলছিল,
“দিদি, সকাল থেকে খেটে যাচ্ছি, অথচ আসল কাজটাই যে করা হল না।”
এই ছোট্ট বাক্যটি ভুবন শেঠের অন্তরে বজ্রপাতের মতো আঘাত করল। তিনি চমকে উঠলেন—
“আসল কাজ! মেয়েটি তো ভোর থেকে একের পর এক কাজ করেই চলেছে, তবুও বলে আসল কাজ করা হল না? তবে কি আমারও কিছু আসল কাজ বাকি রয়ে গেছে? আমি এত কিছু করেও কেনো মনে হচ্ছে সবই অপূর্ণ?”
দিন গড়াল, রাত গড়াল। মেয়েটির ঐ একটিমাত্র বাক্য ভুবন শেঠকে ছেড়ে গেল না। তার অন্তরে গুমরে উঠতে লাগল—“আমার জীবনের আসল কাজ তবে কী?”
এই প্রশ্ন নিয়ে একদিন তিনি অন্তরঙ্গ বন্ধুর কাছে গেলেন। বন্ধু দীর্ঘক্ষণ নীরবে শুনলেন, তারপর শান্ত কণ্ঠে বললেন—
“ভুবন, এই ধরণের ভাবনা অকারণে আসে না। এর জন্ম হয় অভাব থেকে, ভয় থেকে, কিংবা মানসিক অশান্তি থেকে। মানুষ যতক্ষণ অহংকারে আবদ্ধ থাকে, ততক্ষণ তার সত্যিকার কাজ অধরাই থাকে। তোমার প্রয়োজন একজন অভিজ্ঞ আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক, যিনি তোমাকে পথ দেখাতে পারবেন।”
বন্ধুর কথায় প্রথমে হেসে উড়িয়ে দিলেও ভেতরের শূন্যতা ভুবন শেঠকে তাড়িয়ে বেড়াতে লাগল। তিনি স্থির করলেন—কোনো এক গুরুর সন্ধান চাই।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন