মেয়েটির এক বাক্য: আসল কাজ কোথায়? – দ্বিতীয় অংশ
![]() |
My Astrology Ranaghat |
ভুবন শেঠের অহংকার ও গুরুদেবের পরীক্ষা: আধ্যাত্মিক যাত্রার সূচনা
লেখক: প্রদ্যুত আচার্য
পেশা: জ্যোতিষী ও হস্তরেখাবিদ, দার্শনিক চিন্তাবিদ
মাসের পর মাস ভুবন শেঠের খোঁজ চলল। তার অন্তর থেকে বারবার যেন চিৎকার আসছিল—“আমার জীবনের আসল কাজ কোথায়?” অবশেষে খবর পেলেন—পাশের রাজ্যে এক মহাজ্ঞানী আধ্যাত্মিক সাধক আছেন। এই গুরুদেব ছিলেন এতই দার্শনিক ও অভিজ্ঞ যে, সাধারণ মানুষ তাঁর আশ্রমের প্রান্তে পৌঁছলেও দেখা পেত না। দীক্ষা পাওয়া আরও বিরল।
তবুও ভুবন শেঠে ছিল এক অদম্য সংকল্প। তিনি জানতেন, তাঁর অস্থির অন্তর শান্তি পেতে চাইছে সত্যের নির্দেশকের কাছ থেকে পথের আলো। এক জ্যোৎস্না রাতে, যখন চাঁদের আলো অরণ্যের পাতায় খেলা করছিল, ভুবন শেঠ ভোরের প্রথম আলোতে গুরুদেবের আশ্রমে পৌঁছালেন।
আশ্রমের পরিবেশ তাকে অবাক করল। চারপাশে অরণ্যের নীরবতা, পাখির স্নিগ্ধ ডাক, ধূপের মৃদু গন্ধ এবং এমন এক অদ্ভুত প্রশান্তি যা মনে করিয়ে দিচ্ছিল—এখানেই সত্যিকারের শিক্ষা লুকিয়ে আছে। প্রতিটি পদক্ষেপ যেন মনকে সতর্ক করছিল, “এখানে অহংকার কাজ দেয় না। এখানে পৌঁছাতে হয় বিনম্রতা ও ধৈর্যের মাধ্যমে।”
ভুবন শেঠ গুরুদেবের সামনে প্রণাম করলেন, কণ্ঠে কণ্ঠস্বরের তীব্রতা আর অন্তরের বিনম্রতা মিলিয়ে, বললেন—
> “গুরুদেব, আমি আপনার কাছে দীক্ষা নিতে চাই। আমাকে সত্যের পথ দেখান।”
গুরুদেব ধীরে ধীরে ভুবন শেঠের চোখের দিকে গভীরভাবে তাকালেন। সেই দৃষ্টি ছিল যেন আয়নার মতো—যাতে নিজের সমস্ত অহংকার, প্রতিযোগিতা, এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা প্রতিফলিত হচ্ছে। চোখে চোখ রেখে কিছুক্ষণের নীরবতার পর তিনি ধীর কণ্ঠে বললেন—
> “দীক্ষা নিতে হলে যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। আর গুরুদক্ষিণা দেওয়ার সামর্থ্যও থাকা জরুরি। তোমার মধ্যে এই দুইয়ের কোনোটিই আমি দেখি না।”
ভুবন শেঠ স্তম্ভিত। অন্তরে আগুন জ্বলে উঠল। উগ্র কণ্ঠে তিনি বললেন—
> “আমি ভুবন শেঠ! শত শত ব্যবসা, সহস্র মানুষের জীবিকা আমার হাতে। আমার ধন-সম্পদের অভাব নেই। আর আপনি বলছেন আমার যোগ্যতা নেই? গুরুদক্ষিণা দেওয়ার ক্ষমতা নেই আমার? আপনি কি জানেন না আমার ঐশ্বর্য?”
কিন্তু গুরুদেব শান্তভাবেই উত্তর দিলেন—
> “তোমার ধন-সম্পদের ভাণ্ডারই আসলে তোমার অহংকারের আসন। যতক্ষণ তুমি সেই অহংকার ভাঙবে না, ততক্ষণ সত্যের পথে এক পা-ও এগোতে পারবে না।”
ভুবন শেঠ রাগে-অভিমানে আশ্রম ছেড়ে ফিরে এলেন। কিন্তু গভীর মন বলে যাচ্ছিল, “অহংকারই তোমার পথের বাধা।” গুরুর সেই শব্দ যেন তার অন্তরের দরজা ধীরে ধীরে খুলে দিচ্ছিল—অহংকারের পিছনে লুকিয়ে থাকা শূন্যতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এবং শান্তির অভাব।
এই মুহূর্তে ভুবন বুঝলেন—ধন-সম্পদ, প্রভাব, সামাজিক মর্যাদা—এসব কিছুই সত্যিকারের আত্মজ্ঞান দিতে পারে না। সত্যিকারের শিক্ষা আসে, যখন মানুষ নিজেকে সম্পূর্ণভাবে খুঁজে পায়, অহংকারের অবশেষ মুছে ফেলে, এবং ধৈর্য ও বিনম্রতার মাধ্যমে অন্তরের অন্ধকার ভাঙতে শেখে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন