গুরুদেবের শর্ত: অহংকার ভাঙার চাবিকাঠি – তৃতীয় অংশ

 

ভুবন শেঠ ভিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন”
My Astrology Ranaghat 


ভুবন শেঠের অহংকার ভাঙা: ভিক্ষার মাধ্যমে আত্মজীবনের নতুন অধ্যায়


লেখক: প্রদ্যুত আচার্য

পেশা: জ্যোতিষী ও হস্তরেখাবিদ, দার্শনিক চিন্তাবিদ


রাত্রি গড়িয়ে দিন, দিন গড়িয়ে সপ্তাহ—ভুবন শেঠের মনের অস্থিরতা যেন কখনো থামছিল না। তার ধন-সম্পদ, বিশাল সাম্রাজ্য, সামাজিক মর্যাদা—সবকিছুর ভেতরে লুকিয়ে ছিল এক অপূরণীয় শূন্যতা। দিন দিন ভুবন বুঝতে লাগলেন, গুরুদেবের কথা ভুল নয়। সত্যিই, সম্পূর্ণ অহংকার ত্যাগ না করলে মানুষ কি সত্যের পথযাত্রী হতে পারে?


অবশেষে এক দিন তিনি আবার গুরুদেবের আশ্রমে ফিরে এলেন। অন্তরের সমস্ত বিনম্রতা নিয়ে প্রণাম করলেন—


> “গুরুদেব, আমি বুঝতে পেরেছি। দয়া করে আমাকে দীক্ষা দিন। আমার ভুল ক্ষমা করুন।”




গুরু মৃদু হেসে বললেন—


> “দীক্ষা চাইলে আগে গুরুদক্ষিণা চাই। তবে ভয় পেও না, তোমার ধনসম্পদ থেকে আমি কিছু চাই না। তোমার দক্ষিণা হবে ভিক্ষা। তোমাকে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা চাইতে হবে। যখন সেই ভিক্ষা তুমি আমার কাছে আনবে, তখনই দীক্ষা সম্ভব হবে।”




ভুবন শেঠ প্রথমে স্তম্ভিত। এত বড় সাম্রাজ্যের অধিপতি, শত শত মানুষের জীবিকা তাঁর হাতে—তবুও এক খালি ঝুলি ও ভিক্ষার মাধ্যমে শিষ্যত্ব? তবে তিনি জানতেন, গুরুদেবের শর্তই সত্যের পথের প্রথম পরীক্ষা। তাই তিনি মেনে নিলেন।


এইভাবেই শুরু হল ভুবন শেঠের জীবনের নতুন অধ্যায়—অহংকার ভাঙার অধ্যায়।


পরের ভোরে, নিজের রাজপ্রাসাদের ধন-সম্পদ, সোনা-রূপা আর আভিজাত্যের সব ছেড়ে, ভুবন শেঠ পরলেন ভিক্ষার বসন। গায়ে জীর্ণ কাপড়, কাঁধে এক খালি ঝুলি—যে মানুষটি এক সময় রাজপথে রথে চেপে দাপিয়ে বেড়াতেন, আজ এক অচেনা ভিক্ষুকের রূপে জনগণের সামনে দাঁড়িয়েছেন।


প্রথম দিন গ্রামে যখন তিনি ঝুলি হাতে দাঁড়ালেন, বুক কেঁপে উঠল। লজ্জা, সংকোচ, ভেতরের অহংকার—সব একসাথে মাথা তুলল। তবে প্রথম একজন কৃষকের অর্ধেক চাল ঝুলিতে দেওয়া মুহূর্তে, ভুবনের চোখ ভিজে উঠল। তিনি বুঝলেন, ধন-সম্পদের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও মানুষের হাতে থাকা সামান্য পরিমাণ দানও কী অমলিন আনন্দ দিতে পারে।


দিনের পর দিন ভুবন শেঠ ভিক্ষার পথে চললেন। ধনী হোক বা গরিব, সকলের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভিক্ষা নিলেন—কেউ ভাত দিল, কেউ শস্য, কেউ জল, কেউ অর্থ। ঝুলি ধীরে ধীরে ভরে উঠল, কিন্তু তার চেয়ে বেশি ভরে উঠল ভুবনের অন্তরের শূন্যতা। অহংকারের প্রাচীর একে একে ভেঙে যাচ্ছিল।


প্রতিটি ভিক্ষার মুহূর্ত তাকে শেখাচ্ছিল—শক্তি ও প্রভাব নয়, অন্তরের বিনম্রতা ও মানবিকতা হলো আসল সম্পদ। মানুষ যতই ধনী হোক না কেন, সত্যিকারের শান্তি আসে নিজের অহংকার ভাঙার মাধ্যমে।


পূর্ববর্তী অংশ পরবর্তী অংশ 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভাদ্র মাসে জন্ম হলে মানুষ কেমন হয়

শ্রাবণ মাসে জন্ম হলে মানুষ কেমন হয়

হাতের আয়ু রেখা বিচার