পরিশ্রম, ভাগ্য ও জীবনপথের দিশা –জ্যোতিষী প্রদ্যুত আচার্য
MyAstrology রানাঘাট জ্যোতিষ ও হস্তরেখা পরামর্শ সেবা
![]() |
Astrolgy and palmistry |
কর্ম ও পরিশ্রমের সত্য
“কর্ম করো, ফলে আশা করোনা”—ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই উক্তি প্রায় প্রতিটি ভারতীয়ের কাছে পরিচিত। শৈশব থেকেই আমাদের শেখানো হয়েছে—পরিশ্রমই জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি। কিন্তু প্রশ্ন হলো—পরিশ্রম বলতে আমরা ঠিক কী বুঝি?
আমার দৃষ্টিতে পরিশ্রম সেই কর্ম, যা করতে আমাদের মন চায় না, তবু আমরা করতে বাধ্য হই। যেমন—কেউ এসি-ঘরে বসে সারাদিন কাগজপত্র সই করছে; বাইরে থেকে সেটি সহজ মনে হলেও, যদি তার অন্তর না চায়, তবে সেটিই প্রকৃত পরিশ্রম। অন্যদিকে, কেউ ভীষণ রোদের মধ্যে মাঠে কাজ করছে অথচ সে কাজ তার প্রাণের আনন্দ, তবে সেটি আর কেবল পরিশ্রম নয়—সেটি হয়ে ওঠে এক প্রকার আনন্দমগ্ন ধ্যান।
প্লেটো বলেছেন—“যে কাজ ভালোবাসা দিয়ে করা যায়, তা-ই প্রকৃত শিল্প।” একই কথা রবীন্দ্রনাথও বলেছেন—“যে কাজ আনন্দ দেয়, সেই কাজই আমাদের পরম পূজা।” অর্থাৎ, যে কর্মে মানুষ ডুবে গিয়ে নিজের অস্তিত্ব ভুলতে পারে, সে কর্ম কেবল খাটনি নয়, বরং আত্মার তৃপ্তি।
কৃষ্ণের উপদেশ ও কর্মযোগ
শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন—
“হে অর্জুন, তুমি এখন কেবল একজন যোদ্ধা। তোমার ধর্ম যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করা। তাই সকল সম্পর্ক ও পরিচয় ভুলে তোমার ধ্যান থাকা উচিত কর্মে।”
এই উপদেশ আসলে এক ধরনের কর্মযোগের শিক্ষা। গীতায় বলা হয়েছে—
> “কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।
মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সংগোস্ত্বকর্মণি॥” (গীতা, অধ্যায় ২, শ্লোক ৪৭)
অর্থাৎ, মানুষের অধিকার কেবল কর্মে, ফলে নয়। আর যে ব্যক্তি নিজের কর্মে সম্পূর্ণ নিমগ্ন হতে পারে, সে-ই নিজের সামর্থ্যের শতভাগ প্রয়োগ করতে পারে। ফলে সাফল্যের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।
পরিশ্রম বনাম আনন্দময় কর্ম
শুধু খেটে খাওয়ার অর্থেই যদি সফলতা আসত, তবে প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষই সমৃদ্ধ হতো। কিন্তু বাস্তবতায় আমরা দেখি—অনেক খেটে খাওয়া মানুষও অভাব-অনটনে ভোগে। তাই বলে তারা ব্যর্থ, এমন নয়। যদি সেই পরিশ্রম তাদের অন্তরে আনন্দ আনে, তবে অর্থে তারা গরিব হলেও আত্মিক দিক থেকে তারা সমৃদ্ধ, তৃপ্ত এবং সফল।
সফলতা মানে কেবল ধন-সম্পদ নয়। সফলতা মানে জীবনের প্রতি অভিযোগহীন তৃপ্তি। গ্রীক দার্শনিক এপিকিউরাস বলেছেন—“যে মানুষ অন্তরের তৃপ্তি জানে, সে-ই প্রকৃত ধনী।”
ভাগ্যের সীমারেখা
শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—কর্ম করো, ফলে নয় তোমার অধিকার। কিন্তু মানুষ প্রায়ই নিজের ক্ষমতার বাইরে অন্যের ভাগ্যকে ঈর্ষা করে। যেমন—একটি মাছ যদি পাখির দিকে তাকিয়ে ভাবে, “ইশ! যদি আমিও আকাশে উড়তে পারতাম!”, তবে সে নিজের প্রকৃতিকে অস্বীকার করছে। সে ভুলে যাচ্ছে—তার সৃষ্টি জলে সাঁতার কাটার জন্য, আকাশে ওড়ার জন্য নয়।
ঠিক এখানেই মনে পড়ে গ্রীক পুরাণের সিসিফাসের কাহিনী। মৃত্যুর দেবতাকে ধোঁকা দেওয়ার শাস্তি হিসেবে সিসিফাসকে অনন্তকাল এক বিশাল পাথর পাহাড়ে তুলতে হয়, যা আবার নিচে গড়িয়ে যায়। ফরাসি দার্শনিক আলবেয়ার কামু তাঁর “The Myth of Sisyphus” গ্রন্থে লিখেছেন—
“মানুষের জীবনের অর্থহীনতাকেও যদি কেউ আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করে, তবেই সে জীবনকে জয় করতে পারে।”
অর্থাৎ, ভাগ্য যত কঠিনই হোক, মানুষ যদি তাকে সৃজনশীলভাবে গ্রহণ করে, তখনই সে সত্যিকারের মুক্ত।
মহাভারতের কঠোর দার্শনিক শিক্ষা
মহাভারতের প্রতিটি চরিত্র আমার কাছে একেকজন স্বতন্ত্র নৈতিক ও দার্শনিক পরীক্ষক। তারা শুধু ধর্মের অনুসারী নয়, বরং জীবনের সীমাবদ্ধতা, কর্মফল ও অনিশ্চয়তার সাক্ষী। প্রতিটি চরিত্রই নিজস্ব নীতি ও সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে, যার পরিণতি কখনো অনুমেয় নয়।
দুর্যোধন—তিনি ধর্মের সূক্ষ্ম জ্ঞান রাখতেন, কিন্তু সেই জ্ঞানের সঙ্গেই তার ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা ও অহংকারকে মিশিয়ে নিজস্ব পথ অবলম্বন করেছিলেন। এটি আমাদের শেখায়—জ্ঞান থাকলেও যদি নৈতিকতা ও ব্যক্তিগত ইচ্ছা মিলিত না হয়, তবে সঠিক পথে থাকা কঠিন।
যুধিষ্ঠির—সত্যকে কখনো বিসর্জন দেননি। তবু দেখা যায়, তার ধর্মপরায়ণতা তাকে সর্বদা দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করতে পারেনি। এটি কঠোরভাবে আমাদের স্মরণ করায়—সত্য ও নৈতিকতা নিজের স্বীকৃতিতে শক্তিশালী হলেও, বহিরাগত ফলাফল সবসময় নিয়ন্ত্রণযোগ্য নয়।
ভীষ্ম, কর্ণ, দ্রোণ, শকুনি—প্রত্যেকে তাদের স্বধর্ম ও নীতি অটল রেখেছেন, কিন্তু তবু পরিণতি ছিল সংযমহীন ও অপ্রত্যাশিত। এ থেকে শিক্ষা—নিষ্ঠা ও পরিশ্রম সত্ত্বেও ফলাফল সবসময় সৎ বা ন্যায্য নয়।
কৃষ্ণ—একজন অনন্য চরিত্র। তাঁর কাছে নৈতিক ও অনৈতিকের স্থায়ী মানদণ্ড ছিল না। তিনি পরিস্থিতি, প্রয়োজন ও লক্ষ্য অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতেন। তাঁর কাছে কর্মই প্রধান, নীতি নয়। এটি আমাদের শেখায়—পরিস্থিতি ও বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে চলতে না পারলে সেরা নীতি কার্যকর হয় না।
অর্জুন—কৃষ্ণকে সমর্পিত এক যোদ্ধা, যিনি দ্বিধা কাটিয়ে নিজের কর্মে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁরও পরিণতি সবসময় স্পষ্ট ও নিখুঁত ছিল না। এটি দেখায়—সম্পূর্ণ আত্মনিয়োগও নিশ্চিত ফল দেয় না; কর্ম এবং ফলের মধ্যে চিরস্থায়ী বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।
এখানেই মহাভারতের সবচেয়ে কঠোর দার্শনিক শিক্ষা নিহিত—মানুষ যতই নিখুঁতভাবে কর্ম করুক, সঠিক পথে চলুক, তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ফলাফল সবসময় অনিশ্চিত। শ্রীকৃষ্ণ নিজেই জ্ঞান দিয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন, তবু তাঁর নিজস্ব বংশও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। এটি আমাদের কঠোরভাবে স্মরণ করায়—কর্মের নৈতিকতা, দক্ষতা ও পরিশ্রম সত্ত্বেও জীবন সবসময় ন্যায্য বা পূর্বানুমিত ফল দেয় না।
অতএব, মহাভারতের শিক্ষার মূল সারসংক্ষেপ—সঠিক কর্ম করো, নৈতিক নীতি অনুসরণ করো, তবে ফলের প্রতি আসক্ত হবেন না। মানবজীবন চিরকাল অনিশ্চয়তার সঙ্গে বাঁধা। সত্যিকারের পরিশীলিত ব্যক্তি সেই অনিশ্চয়তাকেই গ্রহণ করে।
এখানেই জীবনের দার্শনিক রহস্য—আমরা সঠিককে অনুসরণ করি, তবুও সঠিকের সীমারেখা ভবিষ্যতে পাল্টে যায়।
আত্মসমালোচনার উপলব্ধি
আমি যখন জীবনের দিকে ফিরে তাকাই, দেখি—যা কিছু করেছি, তখনকার জ্ঞান ও বিবেচনায় তা সঠিক মনে হয়েছিল। কিন্তু অনেক পরে বুঝেছি, কিছু সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।
তাহলে কি আমি সারা জীবন সঠিক কাজ করেও ভুল করেছি? হ্যাঁ, হতে পারে। কারণ ভবিষ্যতের আলোয় অতীতের সিদ্ধান্ত নতুন রূপ নেয়।
তবুও আমার কোনো অনুশোচনা নেই। কারণ তখনকার মুহূর্তে আমি সর্বোচ্চ জ্ঞান দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। গীতা বলে—
"সর্বদা নিজের ধর্ম অনুসারে কাজ করো, অন্যের ধর্ম যতই শ্রেষ্ঠ হোক না কেন, তা গ্রহণ করো না।"
কিন্তু এই সত্যও বুঝি—সঠিক কর্ম করেও সবসময় সঠিক ফল আসে না। এর দায় ও ফলাফল আমাকেই ভোগ করতে হবে। এটাই কর্মফল, এটাই জীবনের শিক্ষা।
শেষ কথা
আমার কাছে সাফল্য মানে একটাই—যে কর্মে আনন্দ আছে, সেটিতেই আত্মসমর্পণ করা।
কারণ মানুষ যখন নিজের কর্মে তৃপ্ত থাকে, তখন সে ধনী না হলেও ধন্য হয়ে ওঠে।
ভাগ্য, পরিশ্রম, জ্ঞান—সব মিলেই জীবন এক মহাভারত। আর আমরা প্রত্যেকেই সেই কাহিনির একেকজন চরিত্র।
জীবনে দিশা চাইলে
আজকের জটিল জীবনে কর্ম, ভাগ্য আর সিদ্ধান্তকে সঠিকভাবে বুঝতে চাইলে দরকার অভিজ্ঞ দিশা। সেই দিশা আপনাকে দিতে পারে MyAstrology Ranaghat।
এখানে ড. প্রদ্যুত আচার্য, একজন প্রখ্যাত জ্যোতিষী ও হস্তরেখা বিশেষজ্ঞ, দীর্ঘদিন ধরে মানুষের জীবনসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান দিয়ে আসছেন।
তিনি বিশেষজ্ঞ—
হস্তরেখা বিচার (Palmistry Consultation)
বৈদিক জ্যোতিষ (Vedic Astrology)
জন্মছক বিশ্লেষণ (Horoscope Analysis)
বিবাহ ও প্রেম সংক্রান্ত পরামর্শ (Marriage & Love Astrology)
শিক্ষা, কর্মজীবন ও ব্যবসা সম্পর্কিত দিশা (Career & Business Solutions)
Online Astrology Consultation
শুধু রাণাঘাট বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা ভারত জুড়েই তাঁকে অনেকেই খুঁজছেন Best Astrologer in India হিসেবে। আন্তর্জাতিক স্তরে তিনি পরিচিত একজন World Famous Indian Astrologer and Palmistry Consultant হিসেবে।
আপনি যদি জীবনের অনিশ্চয়তা, কর্মফল, সম্পর্ক বা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তবে Dr. Prodyut Acharya – MyAstrology Ranaghat–এর জ্যোতিষ ও হস্তরেখা পরামর্শ আপনার জীবনপথে সঠিক দিশা দেখাতে সক্ষম।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন