অক্ষয় তৃতীয়াই কি অক্ষয় তিথি ? জেনে নিন অক্ষয় তৃতীয়া সম্বন্ধে
![]() |
অক্ষয় তৃতীয়া |
অন্যান্য - সমুদ্রশাস্ত্র অনুযায়ী হাতের উল্টো পিঠে লুকিয়ে মানুষের ভাগ্য
আজ আমি আপনাদের সঙ্গে তেমনই কিছু শুভ দিনের কথা আলোচনা করব |
সবার প্রথমে একটি বিশেষ শুভ দিন অক্ষয় তৃতীয়া সম্বন্ধে আলোচনা করব |
অক্ষয় তৃতীয়া
এই তিথির প্রকৃতঅর্থ হল যার কোন ক্ষয় নেই বা বিনাশ নেই, যা অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী | অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম অনেক গ্রন্থ ও পুরাণে পাওয়া যায়, যেমন নারদ পুরাণ, মৎস্য পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ, ইত্যাদি গ্রন্থে অক্ষয় তৃতীয়ার সম্বন্ধে বিস্তারিত উল্লেখ করা আছে | শাস্ত্রে কথিত আছে এই যে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন এই সৃষ্টির সূচনা হয়েছিল | বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষে তৃতীয়া তিথিতে এই তিথি, অর্থাৎ অক্ষয় তৃতীয়া | পয়লা বৈশাখের পরে এই তিথিতে, ভারতের বহু ব্যবসায়ী ব্যবসা স্থানে লক্ষ্মী গণেশের পুজো অর্চনা করে, নতুন বছরে ব্যবসার শুভ সূচনা করে থাকেন | এই দিনে বিভিন্ন ধরনের বাধা বিঘ্ন নাশ করার কামনা নিয়ে সিদ্ধিদাতা গণেশের পুজো করা হয়, এই তিথিতে সিদ্ধিবিনায়কের পুজো এক বিশেষ আকর্ষণ | শাস্ত্র মতে বলা হয়েছে ব্যবসা লক্ষ্মী, তাই এই তিথিতে সিদ্ধিদাতা গণেশের সঙ্গে মহালক্ষ্মী দেবীরও আরাধনা করা হয় | মহালক্ষ্মী হলেন গণেশের ভগিনী অর্থাৎ বোন | শ্রী-গণেশ, গণপতি, বিঘ্ন নাশায়ক, এর পূজা অর্চনা অক্ষয় তৃতীয়ার বিশেষ অঙ্গ | তার সঙ্গে মহালক্ষ্মীর আগমনে বিঘ্ন না ঘটে সেই কারণে গনেশ ও লক্ষ্মীর এক সাথে পুজো করা হয় | ভারতীয় শাস্ত্র মতে অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে তার কয়েকটি কারণ আছে |অন্যান্য - এই বিষয় গুলো না জানার কারণে সফল হতে পারছেন না
1. এদিনই বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার ভগবান পরশুরাম পৃথিবীতে আবির্ভাব হয়েছিল |
2. রাজা ভগিরথ এর আরাধনায় তুষ্ট হয়ে গঙ্গা এই তিথিতে পৃথিবীর বুকে জল স্রোতের ধারায় নেমে এসেছিল |
3. এই তিথিতে সত্য যুগের শেষ ও ত্রেতা যুগের আবির্ভাব হয়েছিল |
4. এই তিথিতে মহাভারতে পাণ্ডবরা সূর্যদেবের কাছ থেকে অক্ষয় পাত্র লাভ করেছিল |
5. এদিনই সিদ্ধিদাতা গনেশ বেদব্যাসের মুখনিঃসৃত বাণী শুনে মহাভারত রচনা শুরু করেন।
6. আদি গুরু শঙ্করাচার্য কনক ধারা স্তোত্রম এই তিথিতে রচনা করেছিলেন |
7. এই তিথিতে যক্ষরাজ কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এইদিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
8. পুরীতে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা রথ নির্মাণ এই পূর্ণ তিথি থেকেই শুরু হয় |
9. কেদারনাথ, বদরীনাথ, গঙ্গোত্রী, যমুনত্রীর যে মন্দির গুলো ছয়মাস বন্ধ থাকে, এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়। দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ, যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল।
এই অক্ষয় তৃতীয়া যদি কোন সোমবার পড়ে তাহলে এই তিথির মাহাত্ম্য আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায় | অক্ষয় তৃতীয়া অক্ষয় তিথিতে পরিনত হয় |
আবার মুহূর্ত শাস্ত্র নামক এক শাস্ত্রে, শুভ তিথি গণনা পদ্ধতি তে, আরো কিছু অক্ষয় তিথির কথা উল্লেখ করা হয়েছে |
যেমন
* সোমবারের অমাবস্যা তাকে সোমাবতী অমাবস্যা বলে এই অমাবস্যা তিথি অক্ষয় তিথি|
* শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথি রবিবার হলে, অক্ষয় তিথি বলে |
* শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথি মঙ্গলবার হলে, অক্ষয় তিথি বলে |
* শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথি বৃহস্পতিবার হলে, অক্ষয় তিথি বলে |
হিন্দু বিশ্বাস মতে বলা হয়, এই তিথি গুলোতে কোন পাপ কার্য বা পুণ্য কার্য করা হয়, তাহলে তার ক্ষয় হয় না, যুগের পর যুগ ওই পাপ-পুণ্যের ফল ভোগ করতে হয় | তাই এই তিথি গুলো চিহ্নিত করুন, আর এই তিথি গুলোতে এমন কোন কর্ম করা থেকে বিরত থাকুন যাতে পাপ হয় | এবং এমন কোন কর্ম করুন যাতে পুন্য অর্জন করা যায় |
বিবাহিত মহিলারা অখন্ড সৌভাগ্যবতী হওয়ার জন্য এই তিথিতে নারায়ণের চরণে সিঁদুর ছুঁইয়ে সিঁথিতে ব্যবহার করলে দাম্পত্য জীবন সুখের হবে, এবং সাংসারিক সুখ বজায় থাকবে |
সন্তানের মঙ্গল কামনায়, পাঁচটি তুলসী পাতা নারায়নের চরণে অর্পণ করে সন্তানকে খাওয়ালে সন্তানের উন্নতি হবে |
রুপোর পাত্রে গরম দুধ এবং এক চুটকি কেশর মিশিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনে ভাগ করে খেলে তাদের সম্পর্ক ও ভালবাসার গভীরতা বৃদ্ধি পাবে |
একটি লাল কাপড়ে রুপোর কয়েন বেঁধে তা নিজের সন্তানকে আশীর্বাদ স্বরূপ উপহার দিন, যদি তারা সেইদিন কাছে না থাকে তাহলে তাদের নাম গোত্র উচ্চারণ করে পুজোর স্থানে রেখে দিন, যেদিন আসবে তুলে তাদের হাতে দিয়ে দেবেন, এতে সন্তানের মঙ্গল অবশ্যই হবে |
মানুষের শুভ আশীষ ঈশ্বরের আশীর্বাদ স্বরূপ, তাই এই দিন অসহায় মানুষের সেবা করে তাদের শুভ আশিষ পেলে, সেই শুভ আশিষ এর ফল ক্ষয় হয় না | বিশেষ করে খেটে খাওয়া বৃদ্ধ মানুষের সেবা করলে এর ফল অনেক বেশি পাওয়া যায় | শাস্ত্র মতে নরের সেবাকে নারায়ন সেবা বলা হয়েছে | এই দিনে নর নারায়ণের সেবা করে পুণ্য অর্জন করা যায় |
এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে খেটে খাওয়া বৃদ্ধ মানুষদের শনি দেবের স্বরূপ মনে করা হয়, তাই এনাদের সেবা করে আশীষ পেলে দুর্ভাগ্য দুর হয়ে সৌভাগ্য বৃদ্ধি হয় |
অন্যান্য - গীতার অন্য রকম ব্যাখ্যা
এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শুভ কর্মে নিয়োজিত হয়ে নিজের দুর্ভাগ্য কে দূর করে সৌভাগ্যের অধিকারী হতে পারেন | এই তিথি গুলোতে ভুলেও যেন ভুল না হয়, অর্থাৎ আপনার দ্বারা কোন পাপ কর্ম না হয় তাহলে আপনার পাপের ফল, যুগের পর যুগ আপনাকেই ভোগ করতে হবে |
আজকের লেখা এই পর্যন্তই, এই তথ্য গুলো প্রত্যেক মানুষের জানার প্রয়োজন | প্রতিটা মানুষের জানার উদ্দেশ্যে এই তথ্য শেয়ার করুন, কারণ মানুষকে ভাল তথ্য দিয়েও পুণ্য অর্জন করা যায় | নমস্কার
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনখুব ভালো হয়েছে
উত্তরমুছুন