|
Success |
জীবনে একটু উন্নতি করার জন্য মানুষ কত কিছুই না করে, প্রচুর পরিশ্রম করার পরেও যখন কোনরকম উন্নতি হয় না, তখন মনে সৃষ্টি হয় শুধু হতাশা, নিজেকে দুর্ভাগ্যবান বলে মনে হয় | মনে হয়, ভাগ্য দেবতা আমার ভাগ্যে উন্নতির কথা লেখেনি | যদি এমন ধারণা আপনারও হয়ে থাকে তাহলে আপনার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল | হয়তো আপনার দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও আপনি উন্নতি লাভ করতে পারেননি | কিন্তু আপনার দক্ষতার সাথে, সামান্য কিছু প্রচেষ্টার মাধ্যমে, কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে, আপনি পৌঁছে যেতে পারেন সফলতা শীর্ষস্থানে|
অন্যান্য - Astrology বা জ্যোতিষ শব্দের উৎপত্তি
১. সবার প্রথমে আপনি আপনার লক্ষ্য স্থির করুন, অর্থাৎ আপনি কি করতে চান, কোথায় পৌঁছাতে চান, তা নির্দিষ্ট করুন | যেমন মহাভারতে গুরু দ্রোণাচার্য, রাজকুমারদের অস্ত্রশিক্ষা প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময়, একটি আম গাছে একটি কাঠের পাখি বসিয়ে দিয়ে, এক এক করে সকলে রাজকুমারদের প্রশ্ন করছেন | যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করা হয় সামনের ওই আম গাছে তুমি কি দেখছো, যুধিষ্ঠির বললেন পাখি, আর কি দেখছ? আর আম, আর কি দেখতে পাচ্ছ? যুধিষ্ঠির ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, গাছ, পাতা, আকাশ, মেঘ, সব, সব কিছুই দেখতে পাচ্ছি | গুরু দ্রোণ দূর্যোধন কে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি দেখতে পাচ্ছো? দূর্যোধনও যুধিষ্ঠিরের মত সব কিছুই দেখতে পাচ্ছে, আর তা দেখবে না ই বা কেন, তা না হলে যুধিষ্ঠিরের সামনে ছোট হয়ে যাবে না! এবার ভীম কে জিজ্ঞাসা করছে তুমি কি দেখতে পাচ্ছো? ভীম বললেন আম গুরুদেব, গুরুদেব বললেন আর পাখি? ভীম বললেন পাখিটাই খুঁজছি গুরুদেব | এইভাবে সকলে যে যা দেখলো সকলে তাই বললো | সর্বশেষে অর্জুনকে গুরু দ্রোণাচার্য জিজ্ঞাসা করলো তুমি কি দেখতে পাচ্ছো? অর্জুন বলল পাখির চোখ গুরুদেব, বললেন ঠিক করে দেখো আর কি দেখতে পাচ্ছো? অর্জুন বললেন আমায় ক্ষমা করবেন গুরুদেব, আমার দৃষ্টি পাখির চোখেই স্থির হয়ে আছে, আমি এখন অন্য আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না | গুরুদেব বললেন তাহলে দেরি কিসের, উঠাও বান আর লাগাও নিশানা | ঠিক অর্জুন এর মতই লক্ষ স্থির রাখতে হবে, অর্থাৎ অন্য কোন কারণে উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেললে হবে না |
২. এই কথা সত্য যে, পরিশ্রম না করলে জীবনে উন্নতি করা সম্ভব নয়, আবার একথাও সত্য শুধু পরিশ্রম দ্বারা যদি উন্নতি হতো, তাহলে শ্রমজীবী মানুষেরা উন্নতির শীর্ষে থাকতো | তাহলে পরিশ্রম আপনাকে করতেই হবে, নিজের দক্ষতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে | কথায় আছে অভিজ্ঞতা থাকলেই আত্মবিশ্বাস থাকে, দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা ছাড়া কখনো আত্মবিশ্বাস থাকে না, আর জ্ঞান দ্বারা সেই অভিজ্ঞতার বিস্তার করতে হয় | তাই আপনার দক্ষতা বা অভিজ্ঞতাকে কর্মের মাধ্যমে সম্পুর্ণ ভাবে প্রকাশ করতে, আপনার লক্ষ্য বা যে কাজের উদ্দেশ্য আপনি কর্ম শুরু করেছেন, শুধুমাত্র সেই উদ্দেশ্য সম্পর্ক কর্মগুলো করুন | আর বাকি সমস্ত কাজের দায়িত্ব নিজের ঘাড় থেকে নামিয়ে অন্য কাউকে বুঝিয়ে দায়িত্ব দিয়ে দিন | এতে আপনি নিজেকে সম্পূর্ণ হালকা মনে করবেন, আর আপনার উদ্দেশ্য মূলক কাজ গুলোতে আরো ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে পারবেন | মূলকথা হলো যা করছেন তাই করেন, বাকি কাজ ছেড়ে দিন, সব কাজের দায়িত্ব একা নিলে, শুধু মাত্র পরিশ্রমই হবে উন্নতি নয় |
অন্যান্য -
মনকে নিয়ন্ত্রণ করে বুদ্ধির সঠিক ব্যবহার করার কৌশল
৩. সমাজে চলতে গেলে আমাদের সকলের সাথে মিলেমিশে থাকতে হয়, যেমন পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, কর্মক্ষেত্রের মানুষজন, এবং আরো অনেকে | এদের মধ্যে অনেক মানুষ হতাশাগ্রস্ত, অর্থাৎ নেগেটিভ মাইন্ডের, তারা সব সময় নেগেটিভ কথাবার্তা বলে | ধরুন আপনি কোন কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, তারা আপনাকে এমন কিছু কথা শুনিয়ে দিল, আপনি আর ওই কাজ করার সাহস পাচ্ছেন না | এই ধরনের মানুষ কে চিহ্নিত করুন এবং তাদের সাথে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি করুন, তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে তাদের সাথে মানসিক ভাবে দূরত্ব তৈরি করুন | কারণ এদের সাথে সম্পর্ক থাকলে, আপনি কখনোই সেখানে পৌঁছতে পারবেন না যেখানে আপনি যেতে চান | এদের কথায় আপনার মনে হতাশা ছাড়া আর কিছুই আসবে না |
৪. সমাজে এমন মানুষও বহু আছে যাদের সাথে কথা বললে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়, অর্থাৎ তারা পজিটিভ মাইন্ডের, তারা সবকিছুর মধ্যেই কিছু সম্ভাবনা খুঁজে পায়, এবং বিশ্বাস করে তুমিও পারবে | তাদের চিহ্নিত করুন এবং তাদের সংস্পর্শে থাকতে চেষ্টা করুন | কিন্তু সমস্যা হলো পজেটিভ মাইন্ডের মানুষের সংস্পর্শ পাওয়া খুব কঠিন, কারণ তারা সব সময় ব্যস্ত থাকে, নষ্ট করার মত সময় তাদের কাছে নেই | তাই তাদের লেখা বই পড়ুন, অথবা ইন্টারনেটে তাদের লেখা পড়ুন, ইউটিউব এ তাদের ভিডিও দেখুন, যেমন আমার দুটি প্রিয় মানুষের ভিডিও লিংক দিয়ে দিলাম
সন্দীপ মহেশ্বরী ও
বিবেক বিন্দ্রা | এইভাবে পজেটিভ মানুষের সংস্পর্শে থাকুন এতে আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি হবে |
৫. জীবনে চলার পথে সব সময় পরিস্থিতি আপনার অনুকূলে থাকবে না | তাই বিপরীত পরিস্থিতিকে সামলে নিতে এখন থেকেই প্রস্তুত হোন, নিজেকে তৈরি করুন, এবং মনকে বার্তা পাঠান যে আমি যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারি, মানুষের মন বারবার কোন বার্তা পেলে তা মেনে নিতে শুরু করে | আর একবার যদি আপনার এই বার্তা আপনার মন মেনে নেয়, তাহলে কোন সমস্যা সমাধান করতে আপনার আর কোন অসুবিধা হবে না | পরিস্থিতি যে কারনেই সৃষ্টি হোক না কেন, তা বদলানোর ক্ষমতা কারো নেই, কিন্তু সামলে নেওয়ার ক্ষমতা আপনার হয়ে যাবে | বিপরীত পরিস্থিতিতে মানুষের মন উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে | আর উদ্বিগ্ন মনে যে কোনো সিদ্ধান্তই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে | তাই আপনি যদি আগে থেকেই প্রস্তুত থাকেন, তাহলে আপনার মন উদ্বিগ্ন হবে না, এবং আপনি ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি কে ভালো করে বুঝে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারদর্শী হয়ে যাবেন |
অন্যান্য -
পন্ডিত শীলা রুপা গোস্বামী যে বিষয়গুলোর অভাব মানুষের মধ্যে লক্ষ্য করেছিলেন
৬. তাহলে সফলতা পেতে হলে নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিশ্চিত করুন, শুধুমাত্র আপনার উদ্দেশ্য সম্পর্কিত কাজ করুন, বাকি কাজ অন্যদের দায়িত্বে ছেড়ে দিন, নেগেটিভ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করুন, পজেটিভ মানুষের সংস্পর্শে থাকুন অথবা তাদের লেখা বই পড়ুন বা ভিডিও দেখুন, পরিস্থিতিকে সামলে নিতে শিখুন, মন শান্ত করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন | তার সাথে সাথে আপনার যা বদ অভ্যাস আছে সে গুলোকে ত্যাগ করুন, সম্ভব না হলে যেকোনো একটি বদ অভ্যাস ত্যাগ করুন, কারণ একটি অভ্যাস, অন্য অভ্যাস গুলোকে প্রভাবিত করে, ফলে একটি বদঅভ্যাস ত্যাগ করলে আশা করা যায় অন্য বদঅভ্যাস গুলো ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়ে যাবে |
এই কয়েকটি উপায় মেনে চললে আপনি জীবনে প্রচুর উন্নতি করতে পারবেন, এবং নিজেকেও অনেক উন্নত মানুষ বলে মনে হবে | এর থেকে কেউ আপনাকে বঞ্চিত করতে পারবে না | আজকে এই পর্যন্তই লেখা ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন, শেয়ার করে অন্যদের জানার সুযোগ করে দেবেন | নমস্কার
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন