সফলতা পাওয়ার জন্য মানুষ জীবনে কত কিছু চেষ্টা করে, কিন্তু সবাই কি সফল হতে পারে? না পারে না, কিন্তু কেন?
পন্ডিত শীলা রুপা গোস্বামী যে বিষয়গুলোর অভাব মানুষের মধ্যে লক্ষ্য করেছিলেন|
Utsahan উৎসাহ:- উৎসাহ কাকে বলে? এগিয়ে যাওয়ার আর এক নাম উৎসাহ| উৎসাহ না থাকলে কোন কাজে মন লাগে না, আনন্দ পাওয়া যায় না, সময় শেষ হতে চায় না, আবার উৎসাহ থাকলে সেই কাজে মন বসে, সময় যেন খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়| যেমন ধরুন আপনার কোন বন্ধু বড় গায়ক, খুব ভালো গান করে, গান গেয়ে তার বেশ নাম যশ হয়েছে| আপনিও তার গান শুনে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন, আপনারও গান গাইতে ইচ্ছে করছে, বন্ধুর মতো বড় গায়ক হতে ইচ্ছে করছে| এই উৎসাহ না থাকলে আপনি কখোনোই গান শেখা শুরু পারবেন না, শুধু গান কেন কোনো কাজই শুরু করতে পারবেন না|
Niscayad নির্ণয়/নিশ্চয়:- নির্ণয় কি? কোন কিছুর সিদ্ধান্ত নেওয়া কে নির্ণয় বলে| ইচ্ছা মানুষের অনেক কিছুই থাকতে পারে, কিন্তু শুধু মনে মনে ইচ্ছা বা আসা থাকলেই কখনো ইচ্ছা পূরণ হয় না| আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কি করবেন| যেদিন আপনি কিছু করার সিদ্ধান্ত নেবেন, সেদিন থেকে আপনার জন্য নতুন রাস্তা শুরু হবে, আপনার জীবন বদলাতে শুরু করবে| যেমন ধরুন উৎসাহ সহকারে আপনি নির্ণয় নিলেন আপনি গান শিখবেন, আর আপনি কোন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গান শিখতে শুরু করে দিলেন বা অন্য কোন কাজ শুরু করে দিলেন|
Dhairyat ধৈর্য:- কাটেনা সময় যখন আর কিছুতে, যখনই কাউকে বারবার সময় দেখতে দেখা যায়, তখন সে কোন সমস্যার মধ্যে থাকে| সমস্যা প্রতিটি মানুষের জীবনে কমবেশি থাকে| তাই কিছু কিছু সময় ধৈর্য ধরা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা| আর এই ধৈর্য না থাকলে আপনি অস্থির হয়ে পড়বেন, অস্থিরচিত্তে আপনার নেওয়া পদক্ষেপ, ভুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে| যেমন ধরুন কিছুদিন হল আপনি খুব উৎসাহ সহকারে নির্ণয় নিয়েছিলেন গান শেখার, কিছুদিন প্রশিক্ষণও নিয়েছেন কিন্তু ইতিমধ্যে আপনার উৎসাহ হারিয়ে যাচ্ছে| কারণ আপনি শিখবেন আধুনিক গান, আর আপনার প্রশিক্ষক আপনাকে সা সা রে গা (মা পর্যন্তই থাক)| আপনি বড় অনুষ্ঠানে গান গাইবেন আপনাকে ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠিয়ে হা….... হা....... করা শেখাচ্ছে| এমন আরও কিছু বিরক্তিকর কাজ আপনাকে দিয়ে করাচ্ছে, আপনার শরীর ও আপনার সঙ্গ দিতে চাইছে না| এখানেই ধৈর্যের পরিচয়, শুধু ধৈর্য্য ধরে টিকে থাকলেই চলবে না উৎসাহ সহকারে অটল নির্ণয় ও রাখতে হবে| উৎসাহ নেই শুধু ধৈর্য টিকে আছেন, তাহলে গান শিখতে শিখতেই সময় পেরিয়ে যাবে, গায়ক হওয়া হবে না| শুধু গায়ক কেন কোন কাজেই সফল হবেন না|
Tat-
tat-
karma তৎ তৎ কর্ম :- অর্থাৎ যা করছ তাই কর| বোঝা গেল না?
আমরা কোন কাজ করি সব সময় আমাদের সেই কাজে উৎসাহ থাকে না, ফলে কাজ করি ঠিকই মনোনিবেশ করতে পারি না| আমরা যে কোন কাজ হাত দিয়ে অথবা পা দিয়ে করি, কিন্তু আমরা ছোট থেকেই শুনে আসছি মন দিয়ে কাজ করার কথা| একথা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকেও বলেছিলেন, হে অর্জুন তুমি যথাসময়ে যথা কর্ম কর| অর্থাৎ তুমি একজন যোদ্ধা, তুমি কারো ভাই নও, তুমি কারও বন্ধু নয়, তুমি কারো পিতা নও, তুমি কারো স্বামীও নও, তুমি কারো স্বজন নও, তুমি শুধু একজন যোদ্ধা| ভগবান অর্জুনকে হয়তো এমনই বোঝাতে চেয়েছে যে তুমি যুদ্ধ করতে করতে তোমার স্বজনদের কথা বা অন্য কোন বিষয়ে চিন্তায় মগ্ন থাকো তাহলে যুদ্ধক্ষেত্রে তোমার পূর্ণ যোগ্যতা দেখাতে পারবে না| সুতরাং আমাদের কোন কর্মে সফলতা পেতে হলে পৃথিবীর সমস্ত কিছু ভুলে সেই কর্মের প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে, অর্থাৎ যখন সম্মুখে শুধু পিতা,তখন আমার ভূমিকা শুধু পুত্রের, সন্মুখে যখন গুরু তখন আমি শুধুই শিষ্য, সন্মুখে যখন শিক্ষক, আমি তখন শুধু শিক্ষার্থী, সম্মুখে যখন কর্ম, আমি তখন শুধু কর্মচারী| এইভাবে যখন যেই কর্মে আমরা নিয়োজিত হব তখন তার প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে|
যেমন ধরুন আপনি উৎসাহ সহকারে ধৈর্য ধরে প্রতিদিন গানের প্রশিক্ষণ নিয়ে চলেছেন, আপনি শুধু রুটিনমাফিক হা...... হা...... করে চলেছেন কিন্তু মনোনিবেশ করতে পারছেন না| কারণ আপনার মনে শুধু সমস্যার কথা গুলোই ভেসে উঠছে, আপনি যেই কষ্ট করছেন, সেই কষ্টের কথাই চিন্তা করছেন, আপনার স্বপ্ন চূর্ণ হতে দেখতে পাচ্ছেন| সুতরাং গায়ক যদি হতে হয়, তাহলে আপনাকে গান শেখার জন্য আপনার ওই বিরক্তিকর হা....... হা...... এর জন্যই মনোনিবেশ করতে হবে| তাহলে আপনি আপনার যোগ্যতার সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে সেই বাধা অতিক্রম করতে পারবেন|
Sanga-
tyagat সঙ্গত্যাগ:- অর্থাৎ সঙ্গ ত্যাগ কর| কাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে বলেছেন? আমরা যখনই কোন কর্মের চেষ্টা করি আমাদের সমাজে এমন কিছু লোক আছে যারা তাই নিয়ে সমালোচনা করে থাকে, তারা কেমন জানি অ-খুশি আমাদের এই প্রচেষ্টায়| তারা আমাদের নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে| আমাদের কর্মের খারাপ দিক গুলোকে তুলে ধরে|
যেমন ধরুন আপনি গান শিখছেন গায়ক হওয়ার আশায়, তাদের সঙ্গে মেলামেশা করে আপনি জানতে পারছেন যে আপনার গানের গলা ভালো নয়, অথবা আপনার থেকেও ভালো গায়ক গান শিখে ট্রেনে ট্রেনে গান গায়, ইত্যাদি ইত্যাদি| এই ধরনের মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করার কথা বলেছেন কারণ আপনি যতই দৃঢ় মানসিকতার মানুষ হোন না কেন, এদের উক্তি এক সময় আপনাকে হতাশ করবে, আপনি উৎসাহ, ধৈর্য, হারিয়ে ফেলবেন, আপনার সিদ্ধান্ত নড়বড়ে হতে শুরু করবে| তাই জীবনে কিছু করতে হলে এদের মত মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করতেই হবে|
Sato vrtteh sadbhir bhaktih সৎসঙ্গ ভক্তি :- অর্থাৎ সৎসঙ্গ বা সঠিক মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক করুন| এর মানে যে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করলে সঠিক ধারণা পাওয়া যাবে, উৎসাহ পাওয়া যাবে, মনের জোর বাড়বে, তাদের সঙ্গে মেলামেশা করুন, কিন্তু এই ধরনের মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে খুবই সামান্য, তাই এদের সঙ্গ পাওয়া কঠিন ব্যাপার, এর জন্য আপনাকে তাদের লেখা বই, ইন্টারনেট, ইউটিউব, ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের দেওয়া জ্ঞান সংগ্রহ করতে হবে, মানসিক ভাবে তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখতে হবে| তাহলে আপনি দৃঢ় ইচ্ছা শক্তির অধিকারী হতে পারেন, যে কোনো বাধা অতিক্রম করা আপনার পক্ষে সহজ হয়ে যাবে, আপনার মধ্যে দিব্য জ্ঞানের উদয় হবে| আর একবার যদি আপনার মধ্যে এই জ্ঞানের জ্যোতি জ্বলে ওঠে তাহলে আপনি কখনই উৎসাহ হারাবেন না, ধৈর্য ধরার ক্ষমতা আপনার মধ্যে সৃষ্টি হয়ে যাবে, সমস্ত বাধা অতিক্রম করার ক্ষমতা আপনার থাকবে, সুতরাং আপনি প্রসিদ্ধিলাভ করতে পারবেন|
Prasidhyati প্রসিদ্ধিতি:- অর্থাৎ সফলতায় পৌছে থেমে যাওয়া নয়, সফলতাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া| আমি এই পর্যন্ত পৌঁছেছি এখানেই থেমে থাকার জন্য নয়, আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য| আমাদের জীবন কোন লক্ষ্যে পৌঁছে কখনই থেমে থাকে না| তাই নিজের জন্য ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করুন, আর আপনার সমস্ত অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতা দ্বারা সেই লক্ষ্যে পৌঁছাবার চেষ্টা করুন| লক্ষ্যে পৌঁছে আনন্দ উপভোগ করুন, উৎসব করুন| আবারও কোন নতুন লক্ষ্য স্থির করুন|
আপনারা সকলেই সফলতার উচ্চ শিখরের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন সেই কামনা করেই আজকের লেখা শেষ করছি|
আপনাদের উৎসাহ বাড়ানোর জন্য আমার এই প্রচেষ্টা,
আর কমেন্ট ও শেয়ার করে আমার উৎসাহ বাড়াতে সাহায্য করুন নমস্কার|
Dr. Pradyut Acharya
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন