|
Holi collar |
ভারতবর্ষের সবথেকে রঙিন উৎসব এই হোলি উৎসব,
এই হোলি বা দোল উৎসব হিন্দু ধর্মের অতি প্রাচীন উৎসব | আজ আমি আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব, দোল উৎসব কেন পালন করা হয়, এবং হোলিকা দহন, অর্থাৎ বুড়ির ঘর কেন পোড়ানো হয়? কি এর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা? |
অন্যান্য -
হাতে অর্ধচন্দ্র রেখা থাকলে অবশ্যই জেনে নিন
ঝাসি থেকে প্রায় 80 কিলোমিটার দুর erach Nagar সেখানে সত্য যুগে দৈত্য রাজ হিরণ্যকশিপু নামক রাজার রাজধানী ছিল, তিনি এতটাই শক্তিশালী ও অত্যাচারী ছিলেন, যে তার অত্যাচারে পৃথিবীর মানুষ তো দূরের কথা, স্বর্গরাজ্যের দেবতারা ও ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকতেন | কারণ দৈত্য রাজ হিরণ্যকশিপু ভগবান ব্রহ্মার ঘোর তপস্যা করে, বরদান প্রাপ্তি করে ছিলেন, বরদান ছিল ঠিক এই ধরনের যে তাকে কেউ মারতে না পারে | না কোন মানুষ, না কোন পশু, না কোন দেবতা, না কোন রাক্ষস, না কোন অস্ত্র, না কোন শাস্ত্র, না ঘরে, না বাইরে, না দিনে, না রাতে, না মাটিতে, না আকাশে, অর্থাৎ কোন ভাবেই তাকে কেউ মারতে না পারে | সেই অহংকারের তিনি নিজেকে সর্বশক্তিমান ও অমর মনে করতেন, সকলকে নিজের পুজো করার আদেশ দেন, যে তার আদেশ অমান্য করবে তার মৃত্যুদণ্ড হবে, প্রাণ ভয়ে সকলেই তার পুজো করে|
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
কিন্তু তার নিজের ছেলে প্রহ্লাদ ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত, হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদ কে বোঝায়, তিনি বিষ্ণুর থেকেও বেশি শক্তিশালী, এবং বিষ্ণু তাকে ভয় পায়, তাই সকলে ভগবান বিষ্ণুর নয় হিরণ্যকশিপুর পুজো করে | ভক্ত প্রহ্লাদ সব শুনলো কিন্তু কিছু মানলো না, সে তার মত বিষ্ণুর আরাধনায় মত্ত হয়ে আছেন | তাকে শিক্ষা গুরুর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করতে পাঠানো হয়, যাতে সে বিষ্ণুর কথা ভুলে হিরণ্যকশিপুর অর্থাৎ তার পিতার ক্ষমতা সম্বন্ধে জানতে পারে | সেখানে ভক্ত প্রহ্লাদ সমস্ত রকমের শিক্ষা গ্রহণ করে, কিন্তু ভগবান বিষ্ণুর কথা কিছুতেই ভুলানো যাচ্ছে না | হিরণ্যকশিপু বুঝতে পারে একে কোনভাবেই বোঝানো সম্ভব নয়, তাই তিনি নিজের পুত্রকে হত্যা করার আদেশ দেন |
অন্যান্য -
জ্যোতিষ শাস্ত্র কি?
ভক্ত প্রহ্লাদ কে তার সৈন্যরা নানাভাবে মারার চেষ্টা করে কখনো পাহাড় থেকে ফেলে, কখনো বিষাক্ত সাপের মধ্যে ছেড়ে, কখনো গরম তেলের মধ্যে দিয়ে, আবার কখনো হাতির পায়ের তলে ফেলে মারার চেষ্টা করে, কিন্তু সমস্ত চেষ্টাই বিফলে যায় | তখন হিরণ্যকশিপুর বোন হলিকা বলেন তার কাছে আগুনে না পোড়ার বরদান স্বরূপ চাদর আছে, সেই চাদর গায়ে জড়িয়ে বসলে আগুনে পুড়বে না, তিনি ভক্ত প্রহ্লাদ কে কোলে নিয়ে সাজানো চিতার উপরে বসবেন, আর সেই চিতায় আগুন লাগিয়ে দেবে, তাতে প্রহ্লাদ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে এবং হোলিকা বরদান চাদর থাকার কারণে বেচে যাবে | যেমন কথা তেমন কাজ হোলিকা ভক্ত প্রহ্লাদ কে কোলেনিয়ে চাদর গায়ে জড়িয়ে চিতার উপরে বসে গেল আর তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল, কিন্তু চিতার আগুন থামার পর দেখা গেলো হলিকা যে চাদর গায়ে জড়িয়ে বসে ছিল তা প্রহ্লাদের গায়ে জড়িয়ে আছে এবং হোলিকা পুড়ে ছাই হয়ে যায় | ভক্ত প্রহ্লাদ কে ভগবান বিষ্ণু রক্ষা করে |
তখন থেকেই মানুষ হোলিকা দহন করে আসছে | এসব দেখে হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদ কে নিজের হাতে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন, প্রহ্লাদ কে হত্যা করার আগে তিনি তাকে প্রশ্ন করেন সারাক্ষণ হরিনাম করো কোথায় তোমার হরি? প্রহ্লাদ উত্তর দেয় হরি সর্বত্র বিরাজমান, তখন হিরণ্যকশিপু জিজ্ঞাসা করে এই স্তম্ভে আছে তোমার হরি, প্রহ্লাদ আবারো বলে হরি সর্বত্র বিরাজমান, তখন হিরণ্যকশিপু রাগে তার গদা দিয়ে আঘাত করে স্তম্ভ চূর্ণ করে দেয় এবং সেখান থেকে প্রকট হয় নরসিংহ অবতার | নরসিংহ অবতার তার নখ দিয়ে হিরণ্যকশিপু কে বধ করে | তখন থেকে মানুষ বিজয় উৎসবের আনন্দে হোলিকা দহন এবং রং খেলার আনন্দে মেতে উঠেছেন |
এছাড়াও এই দোল পূর্ণিমা তিথিতে মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেবের জন্ম হওয়ার কারণে এই দোল উৎসবের গুরুত্ব অনেক বেশি বেড়ে গেছে |তাই সকল বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের এর ভক্তরা এই উৎসব খুব নিষ্ঠা ভাবে পালন করে |
অন্যান্য -
তামার পাত্রে জল খাওয়ার উপকারিতা
এই হোলি উৎসবের যদি বিজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করা হয়, তাহলে দেখা যায় যে এই হোলি উৎসব শুধু প্রাচীন কোন গল্প কথায় সীমাবদ্ধ নয় | এর পিছনে সুন্দর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে, যেমন হোলি উৎসব শীতের শেষের দিকে এবং গরমের শুরুর দিকে হয়, এই সময় বাতাসে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকারক রোগের জীবাণু থাকে যার দ্বারা মানুষ রোগ গ্রস্থ হয়ে পড়ে | কিন্তু সারা দেশে একযোগে হোলিকা দহন করার কারণে বাতাসের জীবাণু অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায় এবং বেঁচে যাওয়া জীবাণু থেকে রক্ষা পেতে পরদিন থেকে রং খেলার আয়োজন করা হয়েছে | রং অর্থাৎ হলুদ, কুমকুম, কেশর, রক্তচন্দন, এবং বিভিন্ন ধরনের ফুল ও গাছ গাছরা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ভেষজ রং যা আমাদের ত্বক ও শরিরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী | ঋতু পরিবর্তনের ফলে যে ধরনের রোগ গুলো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তার থেকে রক্ষা করে | যেমন এই সময় বসন্ত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায় | এছাড়া রং খেলার মাধ্যমে নানা রকম রং দেখে মানুষের মন চনমনে তো হয় এবং শত্রুতা ভুলে সকলেই সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয় | কিন্তু বর্তমানে বাজারে কেমিক্যাল রঙের চাহিদা বেশি যে সব রং ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন