তামার পাত্রে জল খাওয়ার উপকারিতা


তাম্র জল

বর্তমান সমাজে শাস্ত্রীয় রীতিনীতি ভুলে অজ্ঞানতার কারণে, মানুষ বিজ্ঞানের দেওয়া নানা সরঞ্জাম ব্যবহার করে ধীরে ধীরে নিজেদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে| এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রকম রোগ ব্যাধি ও মানসিক অশান্তি | আমরা দৈনন্দিন জীবনে যদি কিছু ছোট ছোট পরিবর্তন করি তাহলে আমরা অনেকটাই শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক সুখ ভোগ করতে পারি |
আজ আমি আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব তামার পাত্রে জল খাওয়ার উপকারিতা সম্বন্ধে | প্রাচীন মুনি-ঋষিরা সুস্থ ও নীরোগ থাকার জন্য তামার পাত্রে জল পান করতেন, আর ঐ সময়কার মানুষরাও তামার পাত্রে জল পান করতেন | আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী তামার পাত্রে রাখা জল খেলে আমাদের শরীরে বিষক্রিয়া নষ্ট হয়, এবং শরীরের বজ্র পদার্থ মলমূত্র ঘামের মাধ্যমে বেরিয়ে যায় |
শাস্ত্র অনুযায়ী রাতে তামার পাত্রে জল রেখে সকালে পান করতে হয় (কমকরে আটঘণ্টা) | তামার পাত্রে জল থাকলে সেই জলে খুব অল্প পরিমাণে আয়রন মিশে যায় এবং জলের এনার্জি বৃদ্ধি হয় | আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী এই তাম্র জল শরীরের বাত, পিত্ত, কফ এই তিনটি বিষয়ের ব্যালেন্স ঠিক রাখে | তামার পাত্রে রাখা জলের বিশেষত্ব হলো এই জল কখনো বাসি হয় না ও জলের স্বাদ বেড়ে যায় |
অন্যান্যজল সম্পর্কে এমন কিছু যা হয়তো আগে কখনোই জানেন নি
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তামার পাত্রে জল থাকলে যে প্রক্রিয়া হয় তাকে অলিগোডাইন্যামিক এফেক্ট বলে, যা নানা ধরনের মাইক্রোবস,মোল্ড বা ফাঙ্গি কে নষ্ট করে দেয় এবং শরীর ঠিক রাখে।তামা,একটি ট্রেস মিনারেল যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় |

তাই তামার পাত্রে রাখা জল সেবন করলে শরীরে যে উপকার গুলো পাওয়া যায় আমি তা এক একটা করে তুলে ধরছি |

1) তামার পাত্রে রাখা জল পান করলে জল বাহিত রোগের ক্ষতি কারক ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়, তাই তামার পাত্রে রাখা জল ডায়রিয়া কলেরা ইত্যাদি রোগের প্রতিরোধ করে |

2) বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে তামার পাত্রে রাখা জল মানুষের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে | বর্তমান সময়ে অনিয়ম ও ভেজাল খাদ্য সামগ্রী খেয়ে গ্যাস্ট্রিক বদহজম কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা ভোগ করতে হয়, কিন্তু তামার পাত্রে রাখা জল নিয়মিত সেবন করলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায় | গবেষণায় আরও জানা গেছে তামায় এমন কিছু ক্ষমতা আছে যা জলের সমস্ত জীবাণু ধ্বংস করে জলকে পিওর করে তোলে এবং পেটের অনেক সমস্যা দূর করে |

3) যদি আপনি অনেক ডায়েট কন্ট্রোল করে, অনেক পরিশ্রম করে, অনেক চেষ্টা করেও নিজের ওজন কমাতে পারছেন না | তাহলে আপনি তামার পাত্রে রাখা জল নিয়মিত সেবন করতে পারেন এই জল নিয়মিত পান করলে শরীরের চর্বি ধীরে ধীরে কম হতে থাকে |
অন্যান্য - মানুষের মাঝেই ভগবান

4) আজকাল সৌন্দর্য পাওয়ার জন্য মানুষ নানা রকম কেমিকেল কসমেটিক দ্রব্য ব্যবহার করে এবং আরও অনেক নানা সামগ্রী ব্যবহার করে | কিন্তু শরীরের ত্বকের সৌন্দর্য জন্য এগুলোই যথেষ্ট নয় | আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য জন্য সবথেকে বেশি প্রভাব পড়ে প্রতিদিনের খাদ্য সামগ্রী, আর সেই খাদ্যতালিকায় প্রধান ভূমিকায় থাকে জল | আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী তামার পাত্রে রাখা জল সকালে খালি পেটে নিয়মিত সেবন করলে চামড়া কুঁচকানো ভাব দূর হয় এবং ত্বকের সৌন্দর্য বেড়ে যায় | তামায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ত্বকে নতুন কোষ সৃষ্টি করে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না |
তামা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আমাদের শরীরের ফ্রী র্যাডিকলগুলির বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে, যার ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ অনেক দেরীতে পড়ে।এছাড়াও তামা প্রোটিন ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে, যেটি ত্বক চুল এবং মার্সলের ক্ষতিপূরণে খুব কার্যকর। তামা কপার পেপ্টাইড নামক এক যৌগ তৈরি করে, যা এই প্রোটিনগুলি কে জায়গা মতনপৌঁছে দেয়। তামা কোলাজেন তৈরিতেও সাহায্য করে যা  যৌবন ধরে রাখে এবং ত্বকের  সৌন্দর্য এনে দিতে সাহায্য করে ।


5) বর্তমানে হার্টের সমস্যা ও দিনকে দিন বেড়ে চলেছে | কিন্তু তামার পাত্রে রাখা জল হাটের রোগের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে | আমেরিকার ক্যান্সার সোসাইটি টির একটি রিপোর্ট অনুযায়ী তামার পাত্রে রাখা জল আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল কম করে এবং হার্টবিট নিয়ন্ত্রণ করে তাই যারা হার্টের সমস্যা ভোগ করছে তাদের প্রতিদিন নিয়ম করে তামার পাত্রে রাখা জল পান করা উচিত |

6) আগেকার দিনে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হাড়ের গিটে গিটে ব্যথায় কষ্ট পেতে দেখা যেত |এখন অনেক কম বয়সী মানুষের মধ্যে ও গাঁটে ব্যথার কষ্ট পেতে দেখা যায় তামার পাত্রে রাখা জলে একটি বিশেষ যৌগ সৃষ্টি হয়, এর ফলে আমাদের শরীরের হাড় শক্তিশালী হয় গাঁটে ব্যথা দূর করে, এছাড়াও তামার পাত্রে রাখা জল শরীরে ইউরিক এসিড কম করে হাড়ের ব্যথা দূর করে,
এটি শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখতে সাহায্য করে, পোটাশিয়াম, জিঙ্ক এবং ক্যালশিয়ামের মতন অন্যান্য ট্রেস মিনেরালের সাথে। তামা শরীরের ভিটামিন এবং আমাইনো অ্যাসিডগুলিকে কার্যকর  করে এবং শরীর এর অন্যান্য কাজকর্ম ঠিক রাখে।

7) থাইরয়েডের সমস্যা এখন একটা বড় সমস্যা | থাইরয়েড রোগ থাইরয়েড হরমোন বাড়ার কারণে হয় | এর ফলে হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া | অল্পতেই হাঁপিয়ে ক্লান্তি বোধ করা, ইত্যাদি লক্ষণ গুলো দেখা যায় | থাইরয়েড গ্রন্থির মধ্যে ভালো কাজ করার জন্য যে মিনারেল প্রয়োজন হয় তামা সেই মিনারেল সৃষ্টি করে | থাইরয়েড বিশেষজ্ঞদের অনুযায়ী জল তামার পাত্রে থাকলে জলে সেই উপাদান মিশে যায় যা থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে এবং থাইরয়েড এর কার্যপ্রণালী ও নিয়ন্ত্রণ করে | এই কারণে তামার পাত্রে রাখা জল নিয়মিত সেবন করলে থাইরয়েড সমস্যা ও নিয়ন্ত্রণ হয় |

8) তামার পাত্রে রাখা জল মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী আমাদের মস্তিষ্কের একতন্ত্র কোষ অন্য তন্ত্র কোষে তথ্য পাঠানোর কাজ করে এই তন্ত্র কোষগুলো মাইরেল নামে আবরণে ঢাকা থাকে যা এই তথ্য পাঠাতে সাহায্য করে এই মাইরেল তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাতে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে এবং আমরা তথ্য দীর্ঘদিন মনে রাখতে পারি | অর্থাৎ তামার পাত্রে রাখা জল মস্তিষ্কের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে ব্রেনের স্টিমুলেশন এর জন্য ও খুব প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।

 তামার পাত্রে রাখা জল মানুষের শরীরের অনেক উপকার করে | যেমন আমেরিকার ক্যান্সার সোসাইটির রিপোর্ট অনুযায়ী তামা ক্যান্সারের জীবাণু প্রতিরোধ করতে পারে তাই ক্যান্সারের রোগীদের অবশ্যই তামার পাত্রে রাখা জল পান করা উচিত |
মানুষের শরীরের রক্ত দুষনমুক্ত করতে সাহায্য করে এবং শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে |
অন্যান্য - জ্যোতিষ শাস্ত্র কি? 
তো বন্ধুরা আজ একটি তামার পাত্রে জল সেবন করা শুরু করে দিন একটা সতর্কবার্তা অবশ্যই মনে রাখবেন তামার পাত্রে কখনোই টক জাতীয় উপাদান সেবন করবেন না টক জাতীয় উপাদান শুধু তামার পাত্র পরিষ্কার করতে কাজে লাগাতে পারেন আজকে এই পর্যন্তই নমস্কার

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভাদ্র মাসে জন্ম হলে মানুষ কেমন হয়

শ্রাবণ মাসে জন্ম হলে মানুষ কেমন হয়

হাতের আয়ু রেখা বিচার