|
সামুদ্রিক শাস্ত্র |
জ্যোতিষ শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল Medical Astrology অর্থাৎ চিকিৎসা জ্যোতিষ। যার দ্বারা যে কোনও মানুষের জীবনে কি ধরনের রোগ-ব্যাধি হতে পারে তার পূর্বাভাষ দেওয়া যায়। যে কোনও জাতক-জাতিকার রাশিচক্র বা হস্তরেখা বিচার করে মানুষের জীবনে, কি ধরনের রোগ-ব্যাধি হতে পারে তা নির্ণয় করা বেশ জটিল এবং যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার প্রয়োজন হয়। রাশিচক্র বা হস্তরেখা বিচার করে রোগ নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। মানব দেহে ধাতুগত প্রভাব ও ধাতুগত বৈষম্যের ফলে কি ধরনের প্রভাব হয় তা জানা থাকলে রোগ নির্ণয় পদ্ধতি অনেক সহজ হবে।
অন্যান্য -
আপনার বুড়ো আঙুল আপনার সম্বন্ধে কি বলছে?
সামুদ্রিক শাস্ত্র অনুযায়ী মানব জীবনে ধাতুগত প্রভাব নিয়ে কিছু আলোচনা করব। বিশেষ করে হাতের রেখা বিচার করে খুবই উপকৃত হবেন, এবং নিজেদের ক্ষেত্রে খুব কাজে লাগবে। এছাড়া সাধারণ মানুষও সম্ভাব্য রোগ-ব্যাধির ব্যাপারে সচেতন হতে পারবেন। তাহলে সংক্ষেপে দেখে নিই সামুদ্রিক শাস্ত্র অনুযায়ী মানব জীবনে ধাতুগত প্রভাবে কি কি রোগ হতে পারে।
মানুষের ধাতুগত প্রকৃতি তিন প্রকার –
১) বাত/বায়ু
২) পিত্ত
৩) কফ/শ্লেষ্মা
এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে এই তিন ধাতুর মিশ্র প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। ধাতুগত প্রভাবে মানুষের প্রকৃতি স্বতন্ত্র হয়ে থাকে। এরফলে সকলের সব রকম রোগ হয় না। আবার অনেক রোগ খুব প্রবল ভাবে হয়ে থাকে। মানুষের চেহারা, শারীরিক লক্ষণ,খাদ্যাভ্যাস, আচার-আচরণ, কথা বার্তা, মানসিকতা ও রোগ-ব্যাধি ইত্যাদি ভাল করে পর্যবেক্ষণ করলে এই ধাতুগত প্রভাব ভালো ভাবে বোঝা যায়।
অন্যান্য -
জ্যোতিষ শাস্ত্র কি?
বাত = বায়ু প্রকৃতির জাতক/জাতিকার কিছু সাধারণ লক্ষণ রোগা ধরনের, কর্কশ চেহারা, চোখ ছোট, মাথার চুল কম এবং ধূসর প্রকৃতির, চঞ্চল ও অস্থির দৃষ্টি, হাত পায়ের চামড়া ফাটে। চোখ, মুখ, ও চুল, দাড়ি রুক্ষ ধরনের । চোখে মুখে স্নিগ্ধতা বা নমনীয়তার ভাব থাকে না। হাত, পায়ের শিরা দেখা যায়। গলার স্বর রুক্ষ ধরনের এবং কথাবার্তা জড়িয়ে যায়। গরম খাবার পছন্দ করে থাকে । অল্প অল্প করে, সারা দিনে অনেক বার খাবার খায়। ধৈর্য কম ও কথা বেশীবলে। রাত জাগতে পারে, হাত পায়ে, চঞ্চলতার ভাব দেখা যায়। দাত দিয়ে নখ কামড়ায়, দাঁতে দাঁত ঘসে। রাগী ধরনের, ঘামে সামান্য গন্ধ হয় । যে কোন কিছুতে মনোযোগ কম, চাপা হাসি হাসে ।
ফলাফল এদের সহ্য শক্তি কম, ওষুধে সাইডএফেক্ট বা আলার্জি দেখা যায়। এঁরা খুব অস্থির ও চঞ্চল, চুপ করে কোথাও বসে থাকতে পারে না। কোনো কিছু করতেই থাকে , কথা প্রচুর বলে, কথা বলার সময় হাত-পা নাড়ায়, (কথার ফুলঝুরি) । মিথ্যা কথা গুছিয়ে বলতে পারে। এদের সন্তান সংখ্যা কম হয় । যৌন আবেগ কম থাকে । এদের বীর্যে শুক্রাণু/ডিম্বাণু কম হয়। কথা বলতে বলতে কথা জড়িয়ে যায়। গরম ধরনের খাবার বেশি পছন্দ করে। বার বার খাওয়ার অভ্যাস থাকে , অল্প কিছুতেই রেগে যায়। ঘুরতে বেড়াতে ভালবাসে, মুচকি মুচকি হাসে, যে কোন কাজে মনোযোগের অভাব থাকে, স্মৃতি শক্তি কম হওয়ায় বার বার পড়ে, মুখস্থ করে, আবার ভুলে যায়। কথা দিয়ে কথার দাম রাখতে পারে না। জোরে জোরে হাঁটে, মাঝে মাঝে উৎসাহ কমে যায়, তখন কোনও কাজে উৎসাহ পায় না, মন লাগেনা। কথা বার্তা রুক্ষ ধরনের, মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে চায় না। সঞ্চয় করতে পারে না। সমস্ত কিছুর অপচয় ও অপব্যবহার করে থাকে। অন্যের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে না, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক দীর্ঘ স্থায়ী হয় না। অন্যের জিনিষের প্রতি লোভ থাকে, অন্যের দ্বারা উপকার পেলে মনে রাখে না, মনে মনে নিজের প্রতি উচ্চ ভাব পোশন করে, নাচ, গান, বাজনা ভালবাসে, এদের মনে প্রচুর কৌতূহল, ফলে নানারকম প্রশ্ন করে। নিজের লোকের ও অপরের ক্ষতি করে ফেলে, ধর্ম ও ঈশ্বরের প্রতি আস্থা কম, ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে ও কথা বলে।
অন্যান্য -
হাতের কিছু অত্যন্ত শুভ চিহ্ন
বায়ু প্রকৃতির মানুষের স্বভাবে এই নিচের ভাব গুলো দেখা যায় |
ছাগল (গুঁতোয়), শেয়াল (ধূর্ত), খরগোশ (ভিতু), উট (ঊর্ধ্ব দৃষ্টি), ইঁদুর (খুট খাট করে অনবরত কাজ করে), কুকুর (তাড়া খেয়ে পালায়), হরিণ (সাহস দেখায় ও ভয়ে পালায়) ও কাক (চালাক ও মতলব বাজ) প্রভৃতি স্বভাব প্রাপ্ত হয়।
এদের শারীরিক রোগ ব্যাধি যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, বাত, হাত পা ফাটা, মুখে ঘা, মুখের স্বাদ না পাওয়া, ঘ্রাণ শক্তি কমে যাওয়া, কানের ব্যথা, মাথাধরা, কপালের যন্ত্রণা, মাইগ্রেন, সাইনাস, হেঁচকি ওঠা, খুস্কি, অনিদ্রা, বয়সে কানে কম শোনা, ধাতু ক্ষয়, ছোট বয়সে বিছানায় প্রস্রাব করা, ঘুমের মধ্যে বাক রুদ্ধ হওয়া ও দম বন্ধ হয়ে যাওয়া, শ্লেষ্মায় নাক বন্ধ থাকা, লো পেশার, মহিলাদের অনিয়মিত ঋতু স্রাব হওয়া, পেটে কৃমির উৎপাত, হাতের ও পায়ের শিরায় টান ধরা, ডায়রিয়া, ফোড়া, নিম্নাঙ্গে বা জরায়ু ও মলদ্বারের রোগ হয়। বায়ু প্রকৃতির জাতক-জাতিকা সাধারণত অল্পায়ু হয়ে থাকে।
পিত্ত = প্রকৃতির জাতক/জাতিকা
এদের সাধারণ কিছু লক্ষণ মাথার চুল কালো ও পাতলা, গায়ের রঙ তামাটে হলদে বা কালো। গায়ের চামড়া মোটা, নরম ও শিথিল, অল্প বয়সে ভাজ পরে যায়। প্রচুর ঘাম হয়, মুখে দুর্গন্ধ থাকে। চোখের কোন, জিভ ও হাতের তালু লাল হয়। খুব জোরে কথা বলে, গলার স্বর বেশ জোরাল ও তীব্র। সব ধরনেরই খাবার খায়, ঠাণ্ডা খাবার বেশি ভালবাসে। তেতো ও কষানো খাবার পছন্দ করে। শারীরিক বল মধ্যম। অল্পতেই রেগে যায় আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এঁরা বাকপটু, সাহসী ও উদার। এদের সহ্য ক্ষমতা মধ্যম, সহজে কাউকে ক্ষমা করে না। চুপচাপ বেশি থাকে, সব কথা সংক্ষেপে বলে। এঁরা স্বাধীনতা প্রিয়, স্পষ্টবাদী, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব কিছু জানার চেষ্টা করে। অল্প বয়সেই চুল পাকে ও টাক পড়ে। সেবামূলক কাজে বেশ আগ্রহ থাকে ও দান করে। বংশগত রোগের সম্ভবনা থাকে |
অন্যান্য -
তামার পাত্রে জল খাওয়ার উপকারিতা
ফলাফল এদের সহ্য করার ক্ষমতা মোটামুটি। যৌন আবেগ একটু কম থাকে, বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ বেশী হয়, একটু ঘাম বেশী হয়। ঘামে বেশ দুর্গন্ধ থাকে, জোরে কথা বলে, কথা দিয়ে কিছু কথা রাখতে চেষ্টা করে আবার কিছু কথা রাখতে পারেনা। মেধাবী, বাগ্মী, স্মৃতিশক্তি খুব ভাল। স্থির মানসিকতা । সব কিছু খুঁটিয়ে পড়ার অভ্যাস। চুপচাপ কাজ করে, কথা কম বলে। এঁরা সাহসী ও তেজস্বী, কোনও কিছুতে ভয় পায়না। কারও কাছেই মাথা নত করে না। অন্যের করুনা পছন্দ করে না, রেগে যায়। যারা এর অনুগত হয় তাদের খুব ভালবাসে। দান ও সেবা করার মানসিকতা ও আগ্রহ থাকে। সুন্দর গাড়ি, বাড়ি ও জীবনসঙ্গী লাভের ইচ্ছা থাকে। প্রচুর জল পান করে, শরীর গরম থাকে। ধন-সম্পদ, সঞ্চয় করে থাকে। গান, বাজনা ভালবাসে। এদের সন্তান সংখ্যা কম হয়।
পিত্ত প্রকৃতির মানুষের স্বভাবে এই নিচের ভাব গুলো দেখা যায় |
সাপ (নিষ্ঠুর), বিড়াল (অকৃতজ্ঞ ও আমিষভোজী), ভাল্লুক (ঠাণ্ডা প্রিয়), বেজি (ক্ষিপ্র) প্রভৃতি স্বভাব প্রাপ্ত হয়।
শারীরিক রোগ ব্যাধি গলা, বুক জ্বালা, ওষুধে সামান্য সাইডএফেক্ট বা আলার্জি হয়। অম্ল আমাশয়ের ধাজ থাকে, চুল পেকে যাওয়া, টাক পড়া, রক্তশূন্যতা, ঘাড়ের যন্ত্রণা, জন্ডিস, পাইরিয়া, জননাঙ্গের সমস্যা, বংশগত রোগের প্রবণতা থাকে। পিত্ত প্রকৃতির জাতক-জাতিকা-রা সাধারণত মধ্যায়ু হয়ে থাকে ।
কফ = শ্লেষ্মা প্রকৃতির জাতক/জাতিকা
এদের সাধারণ কিছু লক্ষণ, মাথার চুল ঘন কালো, বড় বড় চোখ, সুন্দর চেহারা, মুখশ্রী কমনীয়, স্নিগ্ধ ও লাবণ্য যুক্ত। গায়ের চামড়া উজ্জ্বল ও নরম। চোখ লাল, দৃষ্টি স্থির, গলার স্বর গম্ভীর, আস্তে কথা বলে, শান্ত স্বভাব, আবেগ সংযত, সদা সতর্কতা অবলম্বন করে, কষ্ট সহিষ্ণু, সব ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করে, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলে, রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বেশি থাকে, দ্রুত রোগ সেরে যায়, মেদ থাকতে পারে।
ফলাফল এদের সহ্য করার ক্ষমতা খুবই বেশী, ওষুধ গ্রহণে সাইডএফেক্ট খুবই কম হয়। সহজে রোগ সারে ও ওষুধ কাজ খুব ভালো করে। ঘন ঘন সর্দি কাশি ও ঠাণ্ডা লাগার ধাত থাকে। কাম প্রবণতা বেশী। এদের সন্তান সংখ্যা কম হয়, ভেবে চিন্তে কাজ করে ও কথা বলে, কথা দিয়ে কথা রাখতে চেষ্টা করে। কথা বার্তা মার্জিত ও মধুরতা থাকবে। গলার স্বর গম্ভীর, সাবধানে কথা বলে। বৃথা বাক্য ব্যয় করে না। বন্ধুত্ব রক্ষা করতে পারে। কিন্তু কথা বলতে বলতে কথার প্রসঙ্গ হারিয়ে ফেলে। তেল, ঝাল ও মসলাদার খাবার খেতে ভালবাসে, ঘি, মাখন, দুধ ও মিষ্টি ইত্যাদি খেতে পছন্দ করে, অল্প গরম খাবার খায়। প্রখর স্মৃতিশক্তি, শান্ত ও ধীর-স্থির, অনেকক্ষণ একভাবে বসে লেখাপড়া বা কোনও কাজ করতে পারে। এঁরা সঞ্চয় শীল ধন, সম্পদ, টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিষ রক্ষা করতে পারে। সহজে কাউকে কিছু দেয়না কৃপন প্রকৃতির, আবার যখন দেয় ভেবে চিন্তে দেয় এবং প্রচুর দান করে।
অন্যান্য -
করতলে অর্ধচন্দ্র রেখা থাকলে অবশ্যই জেনে নিন
কফ প্রকৃতির মানুষের স্বভাবে এই নিচের ভাব গুলো দেখা যায় |
ঘোড়া (ক্ষিপ্র ও উপকারী), হাতি (সাহায্যকারী), সিংহ (তেজী ও নিরপেক্ষ) গরুড় (শত্রু দমন কারি) রাজহাঁস (খারাপ বাদ দিয়ে ভাল গ্রহণকারী) প্রভৃতি স্বভাব প্রাপ্ত হয়।
এদের শারীরিক রোগ ব্যাধি, অতিরিক্ত ঘুম, ভীত ও অলস্য ভাব থাকে | বদহজম, আমাশায়, হৃৎপিণ্ড ও গলার রোগ, পক্স, মূত্রনালিতে পাথর, উচ্চ রক্তচাপ, চোখের ছানি, মাইগ্রেন, স্থূলত্ব, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, চর্বি বাহুল্য, মানসিক রোগ প্রভৃতির সম্ভবনা থাকে।অকারণ সন্দেহ, হতাশা, বিষণ্ণতা, ভূত দেখা, অপদেবতার ভর করা। আয়োডিনের অভাব, বংশগত রোগ যেমন টিবি, হাঁপানি হওয়ার সম্ভবনা থাকে ।
কফ প্রকৃতির জাতক-জাতিকারা সাধারণত দীর্ঘায়ু হয়ে থাকে ।
Astrolger and palmist
Dr. Prodyut Acharya
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন