দ্যাম্পত জীবনে সুখের জন্য এই কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
|
Marriage life
|
বর্তমান কালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সহ প্রায় সারা ভারতে বিয়ের আগে পাত্র ও পাত্রীর রক্ত পরীক্ষার ব্যাবস্থা করেন| কারণ কোন মারণ ব্যাধি বা থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার রোধ করার জন্য|
কিন্তু তারই পাশাপাশি কিছু মানুষ আছেন যারা আজও শাস্ত্র মতে পাত্র ও পাত্রীর যোটক বিচার করে বিবাহ স্থির করে থাকেন| এই যোটক বিচার কি ? এর প্রয়োজন কেন ? এর ফলে লাভ কি হয় ?
সবার প্রথমে কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করব| যে ধরনের ঘটনা আমাদের আশেপাশে আমরা প্রায়ই দেখে থাকি|
যেমন ধরা যাক পাচ বছর আগে অমুক লোকের মেয়ের বিয়ে দিলেন তমুক লোকের ছেলের সাথে| তমুক লোকের ছেলে ভালো ব্যবসা করে ও অর্থনৈতিক দিকথেকে স্বচ্ছল| পরিবারের দিকে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয় তবুও বিয়ের পাচ বছর পর সামান্য অশান্তির কারণে দুজনের বিবাহ বিচ্ছেদ হলো|
আবার এমনও দেখাযায় বিয়ের কয়েক পর স্বামীর প্রান সংকটের মতো অবস্থা| আরও যেমন দ্বিতীয় বিবাহ অথবা বহু-বিবাহ, বা বিবাহের পর অস্বাভাবিক অর্থ সংকট| আরও এরকম প্রচুর ঘটনা দেখা যায়| আর এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটলেই আমাদের সমাজ সম্পূর্ণভাবে সেই অভাগী নারী কে দায়ী করে, একদিন যে কারোর জীবনসঙ্গী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল সুখে সংসার করার আশা করেছিল| আজ তাকে নানারকম অপবাদ দিয়ে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়| এই ধরনের ঘটনাকে কি ভাগ্যের দোষ দেওয়া যায?
আমরা যদিও শাস্ত্র মতে বিবাহের কার্য্য করি, অ-শাস্ত্রীয় ভাবে বিবাহ স্থির করার পূর্ববর্তী প্রয়োজনীয় কর্ম টা সুকৌশলে বাদ দিয়ে দেই | অর্থাৎ এই শাস্ত্রীয় মতে বিবাহের পূর্ববর্তী কর্ম হলো "যোটক বিচার" | একটা কথা স্বীকার করতেই হবে যে শুধু অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা দিয়ে সুখের সংসার হয় না| দাম্পত্য জীবনে সুখের জন্য যোটক বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ |
যোটক বিচার, অষ্টকুট অর্থাৎ আট গুণের সমন্বয়|
যেমন:- ১)বর্ণ-কুট, ২)বশ্-যকুট, ৩)তারা-কুট, ৪)যোনি-কুট, ৫)মৈত্রী-কুট, ৬)গণ-মৈত্রিকুট, ৭)রাশি-কুট ৮) নাড়ী-কুট|
প্রত্যেক কূটের বা গুনের একটি করে নির্দিষ্ট গুনমান সংখ্যা আছে |
যেমন:- বর্ণকুট ১, বশ্যকুট ২, তারাকুট ৩, যোনিকুট ৪, গ্রহমৈত্রীকুট ৫, গণমৈত্রিকুট ৬, রাশি কুট ৭ ও নাড়ীকুট ৮| এইরকম প্রত্যেকটি গুনের বা কুটের সংখ্যা যোগ করলে সম্পুর্ণ গুন মান সংখ্যা দাড়ায় =৩৬ | এখন বর ও কন্যার উভয়ের ৩৬ গুণের কমপক্ষে যদি ১৮/২০ টি গুনের মিল হয় তাহলে জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে এই যোটক বিবাহ যোগ্য, এবং বিবাহ শুভপ্রদ হবে| ৩৪/৩৬ টি গুণের মিল হলে তাকে রাজ যোটক বলা হয়েছে|
এর পর "মাঙ্গলিক যোগ" বা "ভৌমযোগ " বিচারের প্রয়োজন| স্বামী/ স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন মাঙ্গলিক হয় তাহলে অপর জনের জীবন হানীর আশঙ্কাও থাকে। আবার মনের মিল না থাকায় বা সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় কারণে ডিভোর্স হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়।
রাশিচক্রে ১২টি ঘর থাকে। জন্ম সময়ে সেই ঘর গুলোতে লগ্নসহ গ্রহগনের অবস্থানের মাধ্যমে জন্ম কুণ্ডলী নির্মাণ করা হয়| এই ১২টি ঘরের ৫টি ঘরে মঙ্গল গ্রহের অবস্থান একজন মানুষকে মাঙ্গলিক চিহ্নিত করে।
তবে এই মাঙ্গলিক দোষের প্রভাব কম-বেশি থাকে। গবেষণা মতে ভারতের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষের জন্ম কুণ্ডলীতে মাঙ্গলিক যোগ আছে। লগ্নকে প্রথমঘর ধরে, লগ্নে, চতুর্থে, সপ্তমে ,অষ্টমে, ও দ্বাদশ স্থানে মঙ্গল অবস্থান করলে মাঙ্গলিক যোগ বলাহয়| পুরুষের জন্ম কুণ্ডলীতে এই যোগ তার স্ত্রীর জন্যে অশুভ, এবং স্ত্রীর জন্ম কুণ্ডলীতে এই যোগ স্বামীর জন্য অশুভ হয়ে থাকে|
এরপর বিচার করা প্রয়োজন স্বামী ও স্ত্রীর জন্ম-কুন্ডলীতে লগ্ন থেকে সপ্তমভাবের অধিপতি (জায়াপতি) বিচার। সপ্তমভাব থেকে বিবাহ বিচার করা হয়| তাই সপ্তমভাবপতি কোন ভাবের সাথে বা গ্রহের সাথে সম্পর্কিত হয়েছে, সপ্তম ভাব পীড়িত কি না? বিবাহ কারকগ্রহ শুক্র,পাপ পীড়িত কিনা| এই বিষয় গুলো স্বামী /স্ত্রী ও বিবাহিত জীবনের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে| এই সকল গ্রহেরই প্রভাব বিবাহিত জীবনে উন্নতি ও অবনতি নির্দেশ করে| দ্যাম্পত বিষয়ের বিচার করতে সপ্তমভাবের মত দ্বিতীয়ভাব, চতুর্থভাব, অষ্টমভাব, ও দ্বাদশভাব বিচার করা প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ভাব আত্মীয় (কুটুম্বস্থান) । বিবাহিত জীবনে সফলতা ও ব্যর্থতার জন্য আত্মীয়ের ভূমিকা অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে|
চতুর্থ ভাব গৃহসুখ,গৃহ পরিবেশ,
অষ্টম ভাব যৌন কামনা, এবং
দ্বাদশ ভাব থেকে শয্যা সুখ, বিচার করা হয় |
এইভাব গুলোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ|
সেই কারণেই বিবাহ স্থির করার আগে পাত্র-পাত্রীর যোটক বিচার করে নেওয়া উচিৎ |
|
Astrolger Dr. Pradyut Acharya
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন