আঙুল কথা বলে
একটা কথায় আছে চোখ নাকি মানুষের মনের কথা বলে দেয়, অর্থাৎ চোখ হলো মনের আয়না| কিন্তু জ্যোতিষশাস্ত্র বলছে হাতের গঠন দেখে ও একজন মানুষের সম্পর্কে অনেক কিছু জানা সম্ভব | আঙ্গুলের আকার-প্রকার, বৈশিষ্ট্য, মানুষের মধ্যে আলাদা আলাদা মনোভাব সৃষ্টি করে। আঙ্গুলের গঠন দেখে মানুষ চিনতে হলে সবার প্রথমে জানা দরকার কোন আঙুল থেকে কি ফল পেয়ে থাকি।
তর্জনী:- এটি বৃহস্পতির ক্ষেত্রের উপর দাঁড়িয়ে আছে, একে বৃহস্পতির আঙুল বলা হয় | এই আঙুল মানুষের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, অহংকার, নির্দেশ করে। তর্জনীর মাধ্যমে জানা যায় কে কতটা জ্ঞানী, কতটা ভাগ্যবান, এবং কর্মের মাধ্যমে কতটা উন্নতি করবে। তর্জনী আঙ্গুল সাধারনত মধ্যম আঙুলের উপরের পর্বের মধ্যভাগ পর্যন্ত হয়ে থাকে। যেসব মানুষের হাতে তর্জনী আঙ্গুল এর থেকে লম্বা তার মধ্যে জ্ঞান, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, অহংকার বেশি থাকবে, এবং আঙুল লম্বা হওয়ার কারণে বৃহস্পতির ক্ষেত্র শক্তিশালী হবে। আর তর্জনী আঙ্গুল যদি মধ্যম আঙুলের উপরের পর্বের মধ্যবর্তী থেকেও ছোট হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে তার মধ্যে ঞ্জান, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, এবং অহংকার কম থাকবে, এবং বৃহস্পতির ক্ষেত্র দুর্বল হবে। এই আঙুল সুগঠিত হলে বৃহস্পতির শুভ প্রভাব পাওয়া যায়, যদি সুগঠিত না হয়, বাঁকা ধরনের হয়, তাহলে বৃহস্পতির অশুভ প্রভাব রয়েছে বলে মনে করতে হবে। সেই মানুষ হবে স্বার্থপর, ক্ষমতালিপ্সু, প্রতারক, এবং খল প্রকৃতির। কিন্তু আঙ্গুলের নিচে বৃহস্পতির ক্ষেত্র যদি সুগঠিত হয়, তাহলে অন্যের চোখে এই দোষ গুলো ধরা পড়বে না। তর্জনী আঙুল সুগঠিত, এবং একই সাথে যদি বৃহস্পতির ক্ষেত্র সুগঠিত থাকে, তাহলে ব্যাক্তির মধ্যে নীতি পরায়ণতা, নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা, আত্মভিমান দেখা যাবে। বৃহস্পতির ক্ষেত্র খুব বেশি উঁচু হলে, সে কিন্তু জ্ঞানের সঙ্গে ঈর্ষাপরায়ণ, রাগী, এবং অহংকারী হয়ে থাকে। খুব বেশি নীচস্থ হলে, দেবগুরু বৃহস্পতির অনেক কিছুর মৌলিক গুন তাদের মধ্যে থাকে না।
মধ্যমা:- এই আঙ্গুল শনির ক্ষেত্রের উপরে দাঁড়িয়ে আছে, তাই একে শনির আঙুল বলা হয়। শনিদেব হল দন্ড নায়ক, সুতরাং মধ্যমা আঙুল থেকে ন্যায় পরায়নতা, নিয়মানুবর্তিতা, নিরপেক্ষতা, ইত্যাদি নির্দেশ করে। স্বাভাবিক ভাবেই হাতের অন্যান্য সকল আঙুলের থেকে মধ্যমা আঙুল বেশি বড় থাকে। মধ্যমা আঙুল স্বাভাবিকের থেকেও কিছুটা বড় হলে ব্যাক্তি দায়িত্ববান, ব্যক্তিত্বশালী, এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী, হবেন। শনি দেব যোগী, ত্যাগের প্রতীক। তাই একটু ত্যাগী ধরনের হতে পারে এবং একাকীত্বতা পছন্দ করবেন। কিন্তু কখনো কখনো অসৎ সঙ্গে মেলামেশা করে অসৎ কর্মে জড়িয়ে পড়তে পারে। মধ্যমা আঙুল স্বাভাবিকের থেকে ছোট হলে সেই ব্যাক্তি অলস প্রকৃতির হয়, কোন কাজে রুচি থাকে না। মধ্যমা আঙুলের উপরের পর্ব নিচের দুই পর্বের তুলনায় লম্বা বেশি হয়, তাহলে তাদের মধ্যে আধ্যাত্মিকতা বেশি থাকে। যদি আঙ্গুলের মধ্যভাগ বেশি লম্বা হয়, তাহলে ধাতু, কংক্রিট, রসায়ন, প্রযুক্তিগত বিদ্যা বা ব্যবসা সঙ্গে যুক্ত থাকে। নিচের ভাগ বেশি লম্বা হলে সেই ব্যাক্তি ধূর্ত, স্বার্থপর ধরনের হয়। ফলে খারাপ কাজে জড়াবার সম্ভাবনা থাকে। মধ্যমা আঙুলের নিচের ক্ষেত্রকে শনির ক্ষেত্র বলে। শনির ক্ষেত্র সুগঠিত হলে, সেই মানুষ জ্ঞানী, বিচার শক্তি সম্পন্ন, এবং যোগী ধরনের হয়ে থাকে, যোগী অর্থাৎ নিজের ইন্দ্রিয় গুলোকে বস করে রাখতে পারে।
অনামিকা:- এই আঙুল রবির ক্ষেত্রের উপর দাঁড়িয়ে আছে, তাই একে রবির আঙুল বলা হয়। রবি আমাদের নাম, যশ, খ্যাতি, বুদ্ধি এবং সৃষ্টিশীল কর্ম করার মানসিকতা দেয়। অনামিকা আঙ্গুলও মধ্যমা আঙ্গুলের উপরের পর্বের মধ্যভাগ পর্যন্ত দেখা যায়। অর্থাৎ তর্জনী আঙ্গুলের সমান। অনামিকা আঙুল স্বাভাবিকের থেকে, বা তর্জনীর থেকে, বেশি লম্বা হলে সেই ব্যক্তির, ফ্যাশন বা শিল্পকলার দিকে ঝোক থাকতে দেখা যায়। এদের যেকোনো কাজের ঝুঁকি নেওয়ার মতো অদ্ভুত ক্ষমতা থাকে। আবার অনামিকা আঙুল উচ্চতায় স্বাভাবিকের থেকে ছোট হলে, তার কিন্তু যশ লাভের ইচ্ছা খুব থাকে না, অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকে। সাধারনত তর্জনী থেকে অনামিকা ছোট খুব কম মানুষের হাতেই দেখা যায়। অনামিকা আঙুলের নিচে রবির ক্ষেত্র। রবির ক্ষেত্র সুগঠিত হলে সেই ব্যাক্তি সব কাজেই যশ-খ্যাতি প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে। এরা খুব পরিশ্রমী হয়, ব্যবসা ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করে, নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা রেখেই সকল কর্ম করে। এরা একটু ধার্মিক প্রকৃতির হতে পারে, কিন্তু ধর্মান্ধ হয় না | চট করে রাগ করার স্বভাবটা একটু বেশি থাকে, আবার খুব সহজে শান্ত হয়ে যায়।
কনিষ্ঠা:- এই আঙুল বুধের ক্ষেত্রের উপর দাঁড়িয়ে আছে, তাই একে বুধের আঙুল বলা হয় | কনিষ্ঠা আঙুল থেকে আমাদের বাকশক্তি জ্ঞান-বুদ্ধি, চাতুর্য, নির্দেশ করে। কনিষ্ঠা আঙ্গুল স্বাভাবিকভাবে অনামিকার প্রথম পর্ব ছুঁয়ে যায়। কনিষ্ঠা আঙ্গুল স্বাভাবিকের থেকে বেশি লম্বা হলে, সেই ব্যাক্তি হয় তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন, সুবক্তা, ভালো লেখক, এদের স্বভাব হয় বালকসুলভ, তাই সকলের প্রিয় পাত্র হয়ে থাকে | কনিষ্ঠা আঙুল স্বাভাবিকের থেকে ছোট হলে এদের নিজের কথার উপরে নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। এদের আত্মবিশ্বাস কম হয়, মনের ভাব সকলের সামনে প্রকাশ করতে পারে না। কনিষ্ঠা আঙ্গুল বক্র হলে জাতক ঠগ, জোচ্চোর, প্রতারক, ইত্যাদি হয়ে থাকে। কিন্তু আঙুলের নিচে বুধের ক্ষেত্র শুভ হলে সেই ভাব প্রকাশ পায় না।
এছাড়াও আঙুল থেকে মানুষের আরো অনেক স্বভাব জানা যায় | যেমন আঙুলের অগ্র ভাব মানুষের মনের ইচ্ছা প্রকাশ করে। দ্বিতীয় পর্ব থেকে যুক্তিতর্ক করার ক্ষমতা নির্দেশ করে। তৃতীয় পর্ব নির্দেশ করে সফলতা। এরপরে আঙুলের নমনীয়তা। যাদের আঙুল অনমনীয়, অর্থাৎ স্টিলের মতো সোজা, তারা অত্যন্ত কঠোর হৃদয়ের মানুষ, এরা জীবনে অনেক উন্নতি করে থাকে। এরা অত্যন্ত বিশ্বাসী মানুষ হয়। আবার হাতের আঙুল নমনীয় হলে সহজে বাঁকানো যায়, সেই ব্যাক্তি হয় হৃদয়বান মানুষ, বেশি খরচ করে, অল্পতেই মনে আঘাত পায়। খুব কঠিন কাজের দায়িত্ব নিতে পারে না। নরম মনের মানুষ হলেও এদের বিশ্বাস করা যায় না।
বৃদ্ধাঙ্গুল :- হাত খোলার সময় বৃদ্ধাঙ্গুলি যদি 90° ডিগ্রি কোনের থেকে বেশি হয়, তারা অত্যন্ত খরচ বেশি করে, যেকোনো কাজের অনায়াসে ঝুঁকি নিতে পারে। 90° ডিগ্রির কম কোণ উৎপন্ন করলে তারা জ্ঞানী ও কর্মনিপুণ হয়। যাদের কোমর সরু বৃদ্ধাঙ্গুলি, তারা ভালো মানুষ হলেও তাদের থেকে সাবধান, কারণ তারা চটে গেলে সাংঘাতিক রূপ ধারণ করে। মানুষের একহাতে পাঁচটা আঙুল বৃদ্ধাঙ্গুল, তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা, কনিষ্ঠা, এই আঙুলগুলি একেকটি গ্রহের প্রতিনিধি। যেমন বৃদ্ধাঙ্গুলি শুক্রের ক্ষেত্রের উপর দাঁড়িয়ে আছে, তর্জনী বৃহস্পতির ক্ষেত্রে, মধ্যমা শনির ক্ষেত্রে, অনামিকা রবির ক্ষেত্রে, কনিষ্ঠা বুধের ক্ষেত্রের উপরে দাঁড়িয়ে আছে।
Astrolger and palmist
Dr. Prodyut Acharya
Contact +91 9333122768
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন